মহাবিশ্বের কয়েকশ কোটি বছর আগের ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন গবেষণা সংস্থা- নাসা। তবে পৃথিবী জন্মেরও আগের ছবি পাওয়া সম্ভব হলো কীভাবে?
বিজ্ঞানীদের হিসেবে মহাবিশ্বের জন্ম হয় ১৩'শ ৮০ কোটি বছর আগে। আর পৃথিবীর জন্ম হয় আনুমানিক চারশ ৫৪ কোটি বছর (কম-বেশি পাঁচ কোটি বছর) আগে। নাসার জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ দেখালো পৃথিবী জন্মেরও আগের গহীন মহাশূন্যের হাজারো ছায়াপথের ছবি।
কী দেখা যাচ্ছে ছবিতে?
ছবিটি মহাবিশ্বের ছায়াপথগুচ্ছের একটি অংশকে ধারণ করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'এসএমএসিএস ০৭২৩'। নাসা জানিয়েছে, ছায়াপথগুচ্ছটি ৪৬০ কোটি বছর আগে এই অবস্থায় ছিল।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, ছবিতে ছোট ছোট যে আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছে, সেগুলো ভ্রমণ করেছে ১৩০০ কোটি বছর।
এখন পর্যন্ত কোনো মহাকাশ টেলিস্কোপের তোলা মহাশূন্যের সবচেয়ে গহীন এবং সবচেয়ে ভালো মানের ইনফ্রারেড ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে একে। কয়েক হাজার ছায়াপথ ওঠে এসেছে ছবিটিতে।
নাসা জানিয়েছে, পৃথিবীতে মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি এক হাত দূরের একটি ধূলি কণার দিকে তাকান, পৃথিবীর আকাশে ঠিক ওই ধূলিকণার মতোই ক্ষুদ্র জায়গা দখল করে রেখেছে ছবিতে দেখানো ছায়াপথগুচ্ছ।
কীভাবে ধরা পড়ল ছবি?
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। সেই হিসেবে, সূর্যের যে আলো আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে সূর্যের ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড আগের আলো। অর্থাৎ সূর্য যদি অদৃশ্য হয়ে যায় সেটা টের পেতে আমাদের সময় লাগবে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। এইভাবে, যতো দূরের বস্তু আমরা দেখি, সেগুলির আসলে তত আগের চেহারা আমরা দেখতে পাই।
নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের যে অংশের ছবি তুলেছে, সে অংশ থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে লাগে প্রায় চারশ ৬০ কোটি বছর। ফলে, যে ছবিটি টেলিস্কোপ তুলেছে, সেটি আসলে চারশ ৬০ কোটি বছর আগের চেহারা দেখাচ্ছে।
আজ তাহলে ওই অংশের চেহারা কেমন? সেটি জানা যাবে ওই একই নিয়মে চারশ ৬০ কোটি বছর পরে!
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) কী?
জেডব্লিউএসটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মহাকাশ টেলিস্কোপ। যা তৈরিতে খরচ হয় এক হাজার কোটি ডলার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে টেলিস্কোপটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রপুঞ্জ আর ছায়াপথের খোঁজ বের করাই এর মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি অনেক দূরের গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রাণধারণের উপযোগী গ্যাসের উপস্থিতির খোঁজ করতেও সক্ষম টেলিস্কোপটি।
জেডব্লিউএসটি-কে বিবেচনা করা হচ্ছে নাসার হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরী হিসেবে। কক্ষপথে ৩১ বছর কাটানোর পর জীবন সীমার শেষ প্রান্তে চলে এসেছে হাবল। আর হাবলের আবিষ্কারগুলোর উপরই আরও গবেষণা চালাবে জেডব্লিউএসটি।
আরেক ধাপ এগিয়ে বিজ্ঞান
বিবিসি জানিয়েছে, নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, "আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আর এই ছবিতে আপনি ছোট ছোট যে আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পাচ্ছেন, সেগুলো ভ্রমণ করেছে ১৩০০ কোটি বছর।"
তিনি আরও বলেন, "তবে আমরা আরও পেছনে ফিরে যাচ্ছি। কারণ এটা হলো প্রথম ছবি। ওরা সাড়ে ১৩০০ কোটি বছর পেছনের ছবি তুলতে যাচ্ছে। আমরা যেহেতু জানি মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর, তাই আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে গোড়ায় ফিরে যেতে পারছি।"
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে এ বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানীদের কোনো সন্দেহ নেই।