জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি ম্যান্ডেলা

জেলে থাকার সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন তিনি।
জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি ম্যান্ডেলা

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত রাষ্ট্রনায়ক ও দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা।

তার পুরো নাম নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা। ১৮ জুলাই তার জন্মদিন। জাতিসংঘ তার জন্মদিনকে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা ইন্টারন্যাশনাল ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

দক্ষিণ অফ্রিকার একটি ছোট্ট গ্রামে তেম্বু গোত্রে ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ম্যান্ডেলা। দেশটিতে ম্যান্ডেলাকে তার গোত্রের নাম অনুসারে ডাকা হয় মাদিবা।

তার ডাক নাম 'রোলিহ্লাহ্লা'র অর্থ গাছের ডাল ভাঙে যে, এক কথায় দুষ্ট ছেলে। ছেলেবেলায় স্কুলে পড়ার সময় তার শিক্ষক ম্‌দিঙ্গানে তার ইংরেজি নাম রাখেন 'নেলসন'।

তার বাবা ছিলেন রয়াল তেম্বু পরিবারের কাউন্সিলর। নয় বছর বয়সেই বাবার মৃত্যু হয়। পরে তেম্বু গোত্র প্রধান জোঙ্গিন্তাবার পরিচর্যায় বড় হন তিনি।

তারপর থেকে তিনি ক্লার্কবারি বোর্ডিং ইন্সটিটিউট নামে একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে থেকেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করেন।

১৯৩৭ সালে দেশটির ফোর্ট বোফোর্ট শহরের মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্ডটাউন স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। আসলে সেখানেই কালো আফ্রিকান তেম্বু রাজপরিবারের ছাত্ররা পড়াশোনা করত। নামকরা স্কুলটিতে পড়ার সময় ১৯ বছর বয়সে তিনি দৌড় ও বক্সিং অর্থাৎ মুষ্টিযুদ্ধের মতো খেলাধূলায় নিয়মিত অংশ নেওয়া শুরু করেন।

১৯৪১ সালে ২৩ বছর বয়সে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে চলে যান জোহান্সবার্গে। এর দু’বছর পর আফ্রিকানার উইস্টওয়াটারান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি নেন। সেখানে তিনি নানা বর্ণের নানা গোত্রের মানুষের সঙ্গে মেশেন।

আর এখান থেকেই বর্ণবাদ, বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করেন তিনি। এ ভাবনাই তাকে চালিত করে রাজনীতিতে।

ওই বছরই ম্যান্ডেলা যোগ দেন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) এ। পরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এএনসি ইয়ুথ লিগ।

১৯৪৮ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনে আফ্রিকানদের দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করে। দলটির ভাষ্য মতে, তারা বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল না। কিন্তু বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করে রাখার পক্ষে ছিল।

ন্যাশনাল পার্টি ক্ষমতায় আসার কারণেই ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েন। ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৫৫ সালে জনগণের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। সেই সম্মেলনে মূল ভিত্তি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন।

তখন থেকে ম্যান্ডেলা ও তার বন্ধু আইনজীবী অলিভার টাম্বোকে সঙ্গে নিয়ে 'ম্যান্ডেলা অ্যান্ড টাম্বো' নামের একটি আইনি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। যার মাধ্যমে উকিল নিয়োগ করতে দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের টাকা প্রয়োজন হতো না, এমনকি স্বল্প মূল্যে আইনগত সহায়তা দেওয়া হত।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার করে। তবে পাঁচ বছর পরে মামলায় জয়ী হবার পর সবাই নির্দোষ প্রমাণিত হন।

ম্যান্ডেলার কারাজীবন শুরু হয়েছিল রোবেন দ্বীপের কারাগারে। তিনি জীবনের ২৭ বছরের প্রথম ১৮ বছর সেখানে কাটিয়েছেন। জেলে থাকার সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন।

ম্যান্ডেলা কারাজীবন শেষে জানিয়েছিলেন কারাগারেও বর্ণভেদ প্রথা চালু ছিল। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দীদের সবচেয়ে কম খাবার দেওয়া হতো। এমনকি ম্যান্ডেলাকে লেখা চিঠি কারাগারের সেন্সরকর্মীরা অনেক দিন ধরে আটকে রাখত। চিঠি ম্যান্ডেলার হাতে দেওয়ার আগে অনেক জায়গায় কালি দিয়ে অপাঠযোগ্য করে দেওয়া হতো।

ম্যান্ডেলা ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান আর ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

২০১৩ সালের ৮ জুন তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেই বছর ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ নিজের বাড়িতে ৯৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com