রণাঙ্গনের বীর নারী সেতারা বেগম

বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে।
রণাঙ্গনের বীর নারী সেতারা বেগম

১৯৭১ সালের স্মৃতি কখনো দুঃখের, কখনো আনন্দের। এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের অধিকার ফিরে পায়, জানান দেয় নিজেদের বীরত্বের কথা।

এই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বাংলার নারীরাও। তেমনি একজন বীরাঙ্গনার নাম সেতারা বেগম। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে।

সেতারা বেগমের জন্ম ভারতের কলকাতায়। তিনি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিতে যোগ দেন। তখন তার পোস্টিং ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। তার বড় ভাই মেজর হায়দার ছিলেন একজন লেফটেন্যান্ট।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সেতারা বেগম ছুটিতে থাকলেও ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি। টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাকে কাজে যোগ দিতে বলা হলে তিনি তার বাবার মাধ্যমে টেলিগ্রামগুলোর মিথ্যা উত্তর পাঠাতে থাকেন। অসুস্থতা, পা ভেঙে যাওয়ার মতো অযুহাত দিতে থাকেন।

মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে, তার ভাই মেজর হায়দার মেজর নাসিম এবং ভারতীয় একজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের মধ্যকার সেতুটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এরপরের দিন থেকেই তাদের এলাকায় পাকিস্তানি বিমান বিভিন্ন জায়গায় বোমা ফেলতে শুরু করে। সেতারা বেগম এবং তার ভাই কিছুটা ভীত হন এবং অন্য গ্রামে চলে যান।

একাত্তরের জুলাই মাসে সেতারা বেগম ও তার পরিবার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে একটি চিঠি পান। পেন্সিলে লেখা সে চিঠিতে লেখা ছিল, বড় ভাই সেতারা বেগমকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তাই তাকে পরামর্শ দেন তিনি যেন দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়। চিঠিতে তার ভাই আরও লেখেন যে, কোথাও যদি সেতারা বেগম ধরা পড়ে যান, তাহলে যেন সে সেই পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

ভাইয়ের কথা অনুযায়ী তিনি ব্লাউজের নিচে একটি পিস্তল লুকিয়ে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পিস্তলটি ছিলো পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে গেলে আত্মহত্যা করার জন্য।

গুজরাদিয়া সদরঘাট থেকে একটি নৌকায় উঠে সাত দিন সাত রাত পর তিনি সিলেট সীমান্ত পেরিয়ে টেকেরঘাটে যান। সেখান থেকে মেঘালয়ে স্থাপন করা বাংলাদেশ হসপিটালে গিয়ে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পান সেতারা বেগম।

টিনের ঘরের সেই হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছিল ৪০০টি বিছানা। এরই মাঝে যুক্তরাজ্য থেকে বেশ কিছু চিকিৎসক আসেন৷ তারাও যোগ দেন এই হাসপাতালে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আহত সদস্যদের চিকিৎসা দেন তিনি। তাদের ওষুধ পত্র, সেবার ব্যবস্থাও করা হয়৷ সেখানে একটি অপারেশন থিয়েটার প্রতিস্থাপন করা হয়। যার মেঝে ঢাকা হয়েছিল প্লাস্টিক দিয়ে৷

সেতারা বেগমের মতো অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়েই অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা।

প্রতিবদেকের বয়স: ১৪। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com