দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের জন্য মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ হতে হবে। ছেলে বা মেয়ে একজনের বয়স এর নিচে হলে সেই বিয়ে অপরাধ বলে গণ্য হবে।
বাল্যবিবাহের প্রভাব কী?
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে বড় একটি সামাজিক সমস্যা। অশিক্ষা, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা ও নানা কুসংস্কারের কারণে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ইউনিসেফের শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে।
বাল্যবিয়ে কিশোরী মেয়েদের শৈশব কেড়ে নেয় ও তাদেরকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। কিশোরীর সহজাত উচ্ছ্বাস ও গতিশীলতাকে থামিয়ে দেয়। ১৮ বছরের আগে বিবাহিত কিশোরী গৃহে সহিংসতার শিকার হয় এবং শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
কৈশোরকালে গর্ভধারণের ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং গর্ভের বিভিন্ন জটিলতার মুখোমুখি হয়। অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তান প্রসবের কারণে মা ও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব থাকে। এর ফলে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রবণতা তৈরি হয়।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব?
বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সোচ্চার হতে হবে। এর পাশাপাশি বাল্যবিয়ে বিরোধী পদক্ষেপের সঙ্গে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে, সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেও বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ (৬ নং আইন) অনুসারে বাল্যবিবাহকারী ও বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারীদের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের ব্যবস্থা আছে। এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে সমাজ থেকে বাল্যবিয়ের হার অনেকটাই কমে যাবে।
এছাড়াও বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৮ অনুসারে জাতীয় থেকে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটি গঠন করে নিয়মিত সভা আয়োজনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের নির্দেশনা আছে যা বাল্যবিয়ে রোধ করতে কার্যকরী হতে পারে। এই কমিটিসমূহের কার্যক্রমে মূলত বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তোলাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বাল্যবিবাহ একটি দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ করে। তাই বাল্যবিয়ে সমাজ থেকে দূর করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাল্যবিবাহকে শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: খুলনা।