ভুয়া জন্ম সনদ দেখিয়ে বাল্যবিয়ে (ভিডিওসহ)

কাজী অফিসে গিয়ে দেখা যায় অগ্রিম করানো সেইসব বিয়ের বর কিংবা কনেরা ২০২৩ সালে প্রাপ্তবয়স্ক হবে।

বিয়ের কনে কিংবা বরের যেকোনো একজন কিংবা উভয়ই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাকে বাল্যবিয়ে বলা হয়। তবে আমাদের সমাজে সাধারণত মেয়েদেরই বাল্যবিয়ের ঘটনাটা বেশি হয়ে থাকে।

এখনো আমাদের সমাজের অনেক পরিবার মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেন না। তাদের মতে মেয়েদের কাজই শুধুমাত্র ঘরে থেকে কাজ করা।

সরকারের পাশাপাশি অনেক সামাজিক সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করছে। সরকারি হটলাইন নম্বর ১০৯ কিংবা ৯৯৯ -এ ফোন করলেই যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ হাজির হয় বিয়ে বাড়িতে, বিয়ে ঠেকাতে। কোনো নিবন্ধিত কাজী ১৮বছরের নিচের কোনো মেয়েকে বিয়ে পড়াতে পারেন না। তবুও কেন বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিয়ে?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ের বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি করে বিয়ে দেওয়া হয়। কখনও কখনও দেখা যায়, মায়ের বয়স ২৫ বছর আর মেয়ের বয়স ১৮ বছর। কোথাও কোথাও মায়ের বয়স আরো কমও দেখা যায়। জন্ম সনদে বয়স ১৮এর বেশি হলে সাধারণত তেমন কিছু করার থাকে না।

বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে কিছু বিয়ে ঠেকানো গেলেও অনেক অভিভাবক বিয়ে নিবন্ধন করা ছাড়াই মৌখিক কবুলের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করার মতো বড় ভুল করে থাকে। একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিতবেদন থেকে জানা যায়, যেসকল শিশুর জন্ম সনদে বয়স ১৮এর কম তাদের বিবরণ মূল নিকাহ রেজিস্টারে নিবন্ধন না করে সাধারণ কাগজে লিখে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কনের বয়স ১৮ পূর্ণ হলে কাবিনের কাগজ অভিভাবকদের কাছে সরবরাহ করা হয়।

আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মরিচ্যায় একটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে সমবায় অফিসার আল মাহমুদ হোসেন ২০২৩ সালের ৪০টি অগ্রিম বিয়ের খোঁজ পান। কাজী অফিসে গিয়ে দেখা যায় অগ্রিম করানো সেইসব বিয়ের বর কিংবা কনেরা ২০২৩ সালে প্রাপ্তবয়স্ক হবে। কাজী অফিস থেকে উদ্ধার করা নিকাহনামায় বিয়ের সময় ২০২৩ উল্লেখ থাকলেও বিয়েগুলো সম্পন্ন হয়েছে অনেক আগেই এবং তারা সংসারও করছেন। এই ৪০টি বিয়ের সবগুলোই আসলে বাল্যবিয়ে।

বাল্যবিয়ে রোধে জনপ্রতিনিধিদের খুব একটা সহায়তা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন অনেকে। জন্ম সনদ তৈরিতে জনপ্রতিনিধিদের অনুমতি লাগে। অভিভাবকরা মেয়েদের জন্ম সনদ তৈরি করতে গেলে মেয়েটি আসলেই কত বড় তা অনেক সময়ই খতিয়ে দেখা হয় না। আবার অনেক সময় মেয়েটির সঠিক বয়স জানার পরও জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভোট রক্ষার জন্য মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে জন্ম সনদ তৈরি করে দেন বলে জানা যায়।

ভুয়া জন্ম সনদ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। শুধু আইন নয়, ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করার মাধ্যমেই কেবল এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: জামালপুর থেকে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com