হাসানের বয়স ১৩ বা ১৪। তার সাথে কথা হয় রাজধানীর গাবতলীতে। একটি খাবারের দোকানে সে অনিয়মিতভাবে কাজ করে। তবে রাস্তাই তার ঘর, রাস্তাই তার ঠিকানা।
মিরপুরে কথা হয় রুবেলের সাথে। তার বয়সও একই রকম। যখন যা পায় সে তা-ই করে। ফুটওভার ব্রিজই তার নিরাপদ আশ্রয়।
সংসদ ভবন এলাকায় কথা হয় রাবেয়া নামে ১৫/১৬ বছর বয়সী কিশোরী নাজমার সাথে। ফুল বিক্রি করেই তার জীবন চলে। থাকে নানান জায়গায়।
শংকর এলাকায় ছায়ানট স্কুলের সামনে কথা হয় ১৪ বছর বয়সী ঝুমার সাথে। ভিক্ষা, ফুল বিক্রি, বেলুন বিক্রি নানান কিছু করে সে জীবন চালায়। থাকে পুলপার বস্তিতে।
তাদের মধ্যে কেউই টিকা নেয়নি। কারণ হিসেবে বলছে, কেউ তাদের টিকা দেবার কথা বলেনি। তারা নিজেরাও টিকা দেওয়ার দরকারও মনে করে না।
এই পথশিশুরা যদি টিকা না নেয় তাহলে কি অর্জিত হবে আমাদের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা? তারা বয়ে চলবে নাতো মহামারি করোনাভাইরাস?
২০২১ সালের শেষদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নেয় ১২ বছরের ওপরে সকলকে টিকার আওতায় আনা হবে। এর আগে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।
২১ নভেম্বর প্রকাশিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের তালিকা পেলে এ মাসেই তাদের টিকাদান শুরু হবে। শিশুদের টিকাদান কার্যক্রমের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ‘প্রস্তুত’।
তিনি বলেন, “স্কুলে যারা যায়, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। এদের জন্য তিন কোটি ডোজ টিকা লাগবে। আমাদের হাতে টিকা আছে।”
কিন্তু পথশিশু বা যারা স্কুলে যায় না, তারা কি এড়িয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের নজর? ১২ বছরের ঊর্ধ্বে দেওয়া হলে তো সবাইকেই দেওয়া উচিত। শুধু স্কুলগামীদের কেন?
স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যেন টিকা পায় তা দেখভালের জন্য, তাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকারের বাইরেও রয়েছে তাদের অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষক। কিন্তু পথশিশুদের ভাগ্যে তো আর তা নেই।
পথশিশুদের জীবনও গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকেও টিকার আওতায় আনা উচিত। টিকা নিতে তাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা না গেলে এই শিশুরা বাদ পড়ে যেতে পারে করোনাভাইরাসের সুরক্ষা বলয় থেকে।