বায়ুর দূষণ রোধে সফল যে দেশগুলো

দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবেশ ও জলবায়ুর কথা বিবেচনায় বেশ ঝুঁকিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ক্রমাগত পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে আবহাওয়ায়।
বায়ুর দূষণ রোধে সফল যে দেশগুলো

২২ মার্চ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছে ২০২১ সালে বিশ্বের কোনো দেশই প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল। 

বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ৭৬ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম পার্টিকুলার ম্যাটার বা ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণা রয়েছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লকডাউনের কারণে প্রকৃত দূষণের মাত্রা জানা যায়নি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ মাত্রা আরো বেশি হতো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। 

বায়ু দুষণের জন্য একটি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরম ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ সম্প্রতি সময়ে প্রবল আকার ধারণ করেছে। কয়েক বছর আগেই প্রতিবেশি দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে চরম বায়ু দূষণ দেখা দিয়েছিল যা এখনো অব্যাহত আছে। ভারতের আরো কিছু শহরেও বায়ুমান অত্যন্ত খারাপ। 

এছাড়া নেপাল, পাকিস্তানের মতো দেশগুলিও ঝুঁকিতে অবস্থান করছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইন্সটিটিউটের (ইপিআইসি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ভারতীয়দের গড় আয়ু বায়ু দূষণের কারণে নয় বছর কমে যেতে পারে। 

তবে বায়ু দূষণের বিরুদ্ধেও বিশ্বের কিছু দেশ বেশ ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সফল হতেও দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার আগে আসে জাপান। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক হামলার শিকার হওয়ার পর থেকেই বায়ুতে প্রচুর তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া যাচ্ছিল।  সময়ের সাথে সাথে সেগুলো কমতে থাকলেও পরিবেশ দূষণের হার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। 

জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৫০ সালের দিক থেকেই জাপান পারমাণবিক হামলার ক্ষতি উত্তরণের উদ্দেশ্যে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুরু করে। এসময়ে বিভিন্ন কারখানা থেকে প্রচুর দূষিত পদার্থ জাপানের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, বিশেষত কয়লাকেন্দ্রিক শক্তি ব্যবস্থা হওয়ায় বাতাস অত্যন্ত দূষিত ছিল। দীর্ঘ বিশ বছর জাপানে দূষণের হার বেড়ে যাচ্ছিল, অর্থনৈতিক ক্ষতি উত্তরণ করতে গিয়ে পরিবেশের দিকটা অবহেলিত হয়ে যাচ্ছিল। 

অস্ট্রেলিয়ান একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৭০ সাল থেকে জাপান বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। সে সময় বাতাসে পার্টিকুলার ম্যাটার অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার পর থেকে জাপান দূষণ কমাতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করেছে।

১৯৬৮ সালে তারা পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করে। ১৯৭০ সালে ১৪টি আইন পরিবর্তিত হয় যা এখনো কার্যকর আছে। মূলত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, আধুনিক কারখানা নির্মাণ এবং সচেতন নাগরিক সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমেই তারা বর্তমানে প্রযুক্তিতে যতটা উন্নত হয়েছে, পরিবেশও ততটা সুস্থ রাখতে পেরেছে। 

জাপানের পাশাপাশি দূষণের বিরুদ্ধে দারুণ পদক্ষেপ নিতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, নিউজিল্যান্ডের বাযুমান বেশ ভালো এবং দূষণের হার, দূষণজনিত মৃত্যু সবচেয়ে কম। 

নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তারা সাধারণ মানুষকে বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা করতে কাজ করে যাচ্ছে। দূষিত গ্যাসের নিঃসরণ কমানো এবং বাতাস থেকে পার্টিকুলার ম্যাটার দূর করাকেই প্রাধান্য দেয়া হয় দেশটিতে। 

এক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট এবং কার্যকরী আইন রয়েছে যা ১৯৯১ সালে প্রণীত। তবে নিউজিল্যান্ডের দূষণমুক্ত এ পরিবেশের রহস্য হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে এমিশন ইম্পসিবল লিমিটেডের একটি টিমকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ু দূষণ সম্পর্কিত একটি টেকনিক্যাল রিপোর্টকে বিশ্লেষণ করতে। 

তাদের বিশেষজ্ঞ দল এটি বিশ্লেষণ করে নিউজিল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে করণীয় এবং বর্জনীয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে যা অনুসরণ করেই নিউজিল্যান্ডের বায়ু এত পরিচ্ছন্ন। দূষণের বিরুদ্ধে অধিক গুরুত্ব দেয়ার কারণেই মূলত তারা পরিবেশ এত বেশি সুস্থ রাখতে সফল হয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশের মতো নেপালও বায়ু দূষণে জর্জরিত। তবে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে নেপালের পার্থক্য হলো বায়ু দূষণ কমাতে নেয়া চমৎকার পদক্ষেপগুলো।

২০১৯ সালে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে নেপালের কাঠমান্ডু ভ্যালিতে 'আরবান হেলথ ইনিশিয়েটিভ' শুরু করা হয়। এর মাধ্যমে নেপালে নগরায়নের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন বাতাস এবং সুস্থ আবহাওয়া গড়ে তোলাকেও সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে নেপাল বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছে। এতে উন্নতি দেখা গেলেও নেপাল এখনো বায়ু দূষণের চরম সীমায় অবস্থান করছে এবং বায়ু দূষণের ফলে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে অনেক মানুষ।

তবে বিভিন্ন দেশের বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে এত পদক্ষেপগুলো দেখলে বোঝা যায় বাংলাদেশ আসলে এখনো বায়ু দূষণের ওপর ততটা গুরুত্ব দেয়নি যতটা দেয়া প্রয়োজন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত ২৭ মার্চের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প পরিসরে বায়ু দূষণ বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com