নিজের চোখে দেখা বইয়ে পড়া শশীলজ

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য নিয়ে একটি অধ্যায় পড়ছিলাম। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি শব্দে, নাম 'শশীলজ'।
নিজের চোখে দেখা বইয়ে পড়া শশীলজ

মনে পড়ে গেল, মহামারি শুরু হওয়ার আগে মা-বাবা ও ছোট বোনের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলাম সেখানে। ভাবলাম হ্যালোতে লিখে ফেলি সেই ভ্রমণের গল্পটা।

দিনটা ছিল ২০১৯ এর ২৩ অগাস্ট। ময়মনসিংহ ঘুরে দেখার জন্য ঢাকা থেকে আমরা রওনা হই। ট্রেনের ঝিকঝিক করে এগিয়ে চলছে আমাদের ট্রেন। ঢাকার অংশটুকু পার হওয়ার পরই সারি সারি গাছপালা দেখতে পাচ্ছিলাম, যেগুলো আমাদের পেছন দিকে যাচ্ছে শুধু।

বাবা আর আমি কথা বলছিলাম ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়েই। জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এক সময় পৌঁছে যাই ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে।

সেখান থেকে ফুপির বাসা পর্যন্ত যাই রিকশায়। সেখানে গোসল, খাওয়া-দাওয়া করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকালে রওনা দেই শশীলজের দিকে। ফুপির বাসা থেকে শশীলজ খুবই কাছে। রিকশায় যেতে আমাদের সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট।   

ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়িটিই শশীলজ নামে খ্যাত। নয় একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই বাড়ির মূল ফটকে আছে ১৬টি গম্বুজ। বাস্তবের সঙ্গে মিল পেয়েছি বইয়ের পড়ার। ভেতরে প্রায় প্রতিটি কক্ষেই আছে ঝাড়বাতি। স্নানঘরে আছে একটি সুরঙ্গ। মা-বাবার কাছে শুনলাম, এটা দিয়ে নাকি মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

শশীলজের মূল ভবনের সামনে আছে একটি বাগান। শ্বেত পাথরের ফোয়ারার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গ্রীক দেবী ভেনাসের স্নানরত ভাস্কর্য। বাগানের পেছনে লালচে ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শাশীলজ। এই ভবনের পূর্ব প্রান্তের ঘরটি বর্তমানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷

শশীলজের অন্দরে বারান্দা পেরিয়ে কয়েক ধাপ সিঁড়ি অতিক্রম করলেই রঙ্গালয়। এর একপ্রান্তে বিশ্রামঘর ও এর পাশেই হলঘর। হলঘরটি কাঠের মেঝে যুক্ত। বর্ণিল মার্বেল পাথরে নির্মিত একটি জলফোয়ারা আছে হলঘরের পাশেই। ছাদ থেকে ঝোলানো স্বচ্ছ কাচের ঝাড়বাতি আছে জলফোয়ারার ঠিক উপরে।

ভবনটির পেছনে সবুজ ঘাসের একচিলতে উঠান। উঠান পেরোলেই দেখা মেলে একটি অপরিসর জলাশয়ের। জলাশয়টির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের ঘাট দুটি জরাজীর্ণ হলেও দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বিতল স্নান ঘাটটির সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য গাছগাছালি আছে এখানে।

২০১৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জাদুঘর স্থাপনের জন্য শশীলজ অধিগ্রহণ করে।

শশীলজ থেকে বের হয়ে আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালায়। অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শিখেছি। দিনটির কথা আমার সবসময় মনে থাকবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com