'ছোট বোন ডেকে বলল, বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফালাইছে'

"রেডিওতেও শুনলাম কুখ্যাত মেজর ডালিমের কণ্ঠ। আব্বা বললেন, বাসায় থেক না।”
'ছোট বোন ডেকে বলল, বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফালাইছে'

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় একটি বড় ভয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর নিকটতম ছাত্রকর্মী মহিব উল ইসলাম ইদুর কথায় এমনটাই ওঠে আসে। হ্যালোর আর্কাইভ থেকে তার সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো।

সেই রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি হ্যালোকে বলছিলেন, ১৫ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা প্রোগ্রামে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। আগের দিন সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় ককটেল ফাটানো হয়। গাজি গোলাম মোস্তফা ভাইয়ের সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম ঘটনাস্থলে। বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল ও ছেলে বউ সুলতানার সাথে দেখা হয় সেখানে। তখন রাত আনুমানিক প্রায় ১১টার মতো বাজে। শেখ কামালের শ্বশুর বাড়ি ছিল বকশিবাজারে। গাজি ভাই একটু মজা করেই বললেন এতো রাতে তোমাদের আর বাসায় যাওয়ার দরকার কী? শ্বশুর বাড়ি চলে যাও।

শেখ কামাল বলল, “না! সারাদিন খাটাখাটুনির পর বাসায় যাই। কালকে আব্বা আসবেন, যাই ফ্রেশ ট্রেশ হতে হবে, বাসায় যাই।”

আমিও সেখান থেকে বাসায় চলে আসি। ভোরবেলা আমার ছোট বোন ডেকে বলল ভাইয়া তাড়াতাড়ি ওঠো, “বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফালাইছে।”

ঘুম থেকে ডাকলে আমি একটু রাগারাগি করতাম সবসময়ই। তো ঐদিনও রেগে গিয়ে বললাম, ধুরর! একটু ঘুমাতে দে তো।

এরমধ্যে আব্বা এসে বলার পর তখন জেগে উঠলাম। রেডিওতেও শুনলাম কুখ্যাত মেজর ডালিমের কণ্ঠ। আব্বা বললেন, “বাসায় থেক না।”

তখন আমি বেরিয়ে গেলাম। হাঁটতে হাঁটতে মালিবাগ বাগান বাড়ি পর্যন্ত চলে গেলাম। দেখলাম লোকেও বলাবলি করছে।

মুহুর্তেই দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়া লক্ষ্য করেন তিনি। এ বিষয়ে মহিব উল ইসলাম ইদু হ্যালোকে বলেন, পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক উলট পালট হয়ে গেল। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিরা তখনই তৎপরতা শুরু করে দিলো। ওরা রাস্তায় নেমে এল। এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকারাও বেরিয়ে এল। ভাবতেছিলাম যে, কোনো স্থান থেকে প্রতিরোধের ডাক আসুক আমরা সেখানে যাব। আমরা তো ৬৯ সালে পাকিস্তান সামরিক জান্তার কারফিউও ভঙ্গ করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম কেউ আর ডাক দিচ্ছে না। টানা দুই বছর দিনের বেলায় প্রকাশ্যে থাকতাম তবে রাতে বাড়ি থাকতাম না ভয়ে। প্রথম ছয় মাস ঢাকার বাইরে আত্মগোপনে ছিলাম। মনে হলো বিপক্ষ শক্তিরাই আবার ক্ষমতা নিয়ে নিল। কার জন্য এই মুক্তিযুদ্ধ করলাম। তখন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতাম না ভয়ে। সম্মানের বিষয়টি তো ছিলই না। দিন দিন নিরাশ হয়ে যেতে থাকলাম।

বঙ্গবন্ধুর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাকে ১৯৬৫ সাল থেকে চিনতেন। মালিবাগে রাজারবাগ ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের কাউন্সিলে এসে বঙ্গবন্ধু আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে দিয়ে যান। তখন থেকে রাজনীতিতে নিয়মিত হয়ে যাই আমি। বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দিলেন তখন আমাদের একটা কাজ ছিল। ছয় দফার লিফলেট গোপনে মানুষের বাসায় বিলি করা ও এর পক্ষে সাক্ষর সংগ্রহ করা। 

এ নিয়ে আমি একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলাম, যদিও এদিনই রমনা থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আমাকে তুই করেই ডাকতেন। আমি উনার বাসায় যেতাম। উনি চুল টেনে দিয়ে বলতেন কীরে কেমন আছিস? এগুলো এখনও হৃদয়ে গেঁথে আছে। ৭০’র নির্বাচনে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তৎকালীন ২১ টা জেলার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমি ৮/১০টা জেলায় নির্বাচনী প্রচারণার কাজে গিয়েছি।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com