১৩ জুন নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস।
এটি এমন একটি সমস্যা যা শুধু ধরন বদলাচ্ছে, কিন্তু নির্মূল হচ্ছে না। এর শেকড় অনেক গভীরে।
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে আমাদের অভিভাবকেরা মেয়েকে দূরের স্কুলে পর্যন্ত পাঠাতে ভয় পান। মেয়েদেরকে বাইরের কোনো কাজে পাঠাতে সায় দিতে চান না। যে বাবা মা মেয়ের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তারাও এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকেন। অথচ একজন ছেলেকে নিয়ে এসব ভাবতে হয় না।
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরও অনেক মেয়ে তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হয় ঠিক এ কারণেই।
বাসে, সড়কে, বাজারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোথায় নেই নারী উত্যক্তকরণ?
বাল্যবিয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই ইভটিজিং। শুধুমাত্র এই ব্যধির কারণে অনেক মেয়েরই উজ্জ্বল ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়, তাদের জীবনে নেমে আসে বাল্যবিয়ের মতো কালো অন্ধকার। অনেক মেয়ে পড়াশোনা করেও কর্মজীবনে পা দিতে ভয় পায় শুধুমাত্র তার নিরাপত্তার কথা ভেবে।
আমার বাসা থেকে স্কুল অনেক দূরে। আমি স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে দিয়ে আসেন এবং স্কুল ছুটির সময়ে আম্মু নিয়ে আসেন। আমি কখনোই স্কুলে একা যাওয়া আসা করিনি। আমার অভিভাবকেরা আমার একা বাইরে যাওয়াটা অনিরাপদ মনে করেন শুধুমাত্র ইভটিজিংয়ের কারণে।
ইভটিজিং প্রতিরোধে শুধুমাত্র মেয়ের অভিভাবকদেরই সচেতন হতে দেখা যায়। আমি কখনো দেখিনি ইভটিজিং রোধে কোনো ছেলের অভিভাবককে সচেতন হতে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইভটিজিংয়ের শিকার মেয়েটিকেই দোষারপ করা হয়। তার পোশাক সঠিক ছিল না, তার চলাফেরা ভালো না, মেয়েদের রাতের বেলা বাইরে যাওয়া ঠিক না, বাজারে যাওয়া ঠিক না কতকিছু শুনতে হয়।
এমন তো হয় না যে মেয়েদের ভয়ে ছেলে সন্তানকে বাইরে যেতে দিতে ভয় পান অভিভাবকরা। ছেলেদের বাজারে যাওয়া ঠিক না কারণ সেখানে দুষ্ট মেয়ের দল থাকে, এমন তো হয় না। বরং এই দৃশ্যপট কল্পনাতেও আনতে পারেন না অনেকে। ঠিক মেয়েদের ক্ষেত্রেও এমনটাই হওয়া উচিত। একটা মেয়ে হয়রানির শিকার হবে, এটাও যেন কাল্পনিক গল্প হয়ে যায়।
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আচরণ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে ছেলে সন্তানকে অবশ্যই শিক্ষা দিতে হবে। এটা ঘর থেকেই শেখাতে হবে। আপনার ঘরের ছেলেটা এই শিক্ষা পেলে আজ আমি বেঁচে যাই আর আমার ভাই এই শিক্ষা পেলে আপনার মেয়েটা বেঁচে যায়। তাই আমার আপনার সচেতনতার বিকল্প নেই।