বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় ১২তম অবস্থানে রয়েছেন এই বাউল সাধক।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ লালন ধর্ম, জাত, কূল, বর্ণ, লিঙ্গ ও মানুষের ভেদাভেদ দূর করতে সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন। তার মৃত্যুর ১২৯ বছর পর আজও মানুষ তার গানের মাধ্যমেই মানব প্রেমের জয় গান করে, গানের মাঝেই তাকে স্মরণ করে।
কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার লালনের আখড়া এখন লালন ভক্তদের তীর্থ ভূমি। তাই প্রতিদিন লালন আখড়ায় ভীড় করে শত শত মানুষ।
এখানে ঘুরতে আসা অনেকের সঙ্গে কথা হয় আমার। দর্শনার্থীদের একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তিনি লালনের ভক্ত।
বললেন, “লালনের গানে আমি মুগ্ধ হই। তিনি মানবতার কথা বলেন। প্রতি বছর এক হলেও এখানে আসি।”
রাব্বি ইসলাম নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, “লালন সাইজির গান আমি অনেক ভালবাসি। তার গানে অনেক বোঝার আছে, জানার আছে। সেই কারণে তার আখড়া বাড়িতে ঘুরতে এসেছি।”
লালন ফকিরকে ‘বাউল-সম্রাট’ বা ‘বাউল গুরু’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার গানের মাধ্যমেই ঊনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাউল গুরু সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষা নেওয়ার পর কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে আখড়া স্থাপন করে তার প্রকৃত সাধক জীবনের সূচনা হয়।
"যা আছে ভাণ্ডে, তাই আছে ব্রহ্মাণ্ডে"- এই ছিল লালনের দর্শন। বৈষ্ণব সহজিয়া, বৌদ্ধ সহজিয়া ও সুফিবাদের সংমিশ্রণে মানবগুরুর ভজনা, দেহ-কেন্দ্রিক সাধনাই লালন প্রদর্শিত বাউল ধর্মের মূলমন্ত্র। লালন ফকির বিশ্বাস করতেন সব মানুষের মধ্যেই বাস করে এক 'মনের মানুষ'। আর সেই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় আত্মসাধনার মাধ্যমে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়ায় নিজের আখড়ায় ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর, বাংলা ১২৯৭ সালের পয়লা কার্তিক ১১৬ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন মহাত্মা ফকির লালন শাহ।