নিভে গেল যে নক্ষত্র

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী।
নিভে গেল যে নক্ষত্র

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, নির্মাতা ও সাবেক সাংসদ কবরী শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক জানিয়েছেন।

সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকের হৃদয় জয় করা এই অভিনেত্রীর অসামান্য অবদানকে স্মরণ করছে দেশের মানুষ। ঢাকাই চলচ্চিত্রে মিষ্টি মেয়ে হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কবরী পরের অর্ধশতকে দুই শতাধিক সিনেমায় কাজ করেছেন। শীর্ষ পাঁচ ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই। ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা গড়েছিল ‘রাজ্জাক-কবরী’ জুটি। যা এখনো দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছে।

২০১৭ সালে নিজের জন্মবার্ষিকীতে গ্লিটস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জীবনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “কী পেলাম আর কী পেলাম না এসব ভাবি না। জীবনে যতটুকুই কাজ করেছি বৃথা যায়নি।”

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেন নন্দিত এই অভিনেত্রী। জন্মস্থান বোয়ালখালী হলেও শৈশব ও কৈশোরে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গি বাজারে। তার আসল নাম মিনা পাল। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো অভিনয় করেন তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এই চলচ্চিত্রে অভিষেকের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন কবরী।

তার অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে তিতাস একটি নদীর নাম, সুজন সখী, আগন্তুক, নীল আকাশের নিচে, ময়নামতি, সারেং বৌ, দেবদাস, হীরামন, চোরাবালি ও পারুলের সংসার।

জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা তিনি নিজেই গ্রন্থিত করে গেছেন তার আত্মজৈবনিক রচনায়। ‘স্মৃতিটুকু থাক’ শিরোনামে কবরীর লেখা সেই বইটি ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড- বিপিএল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নানা আয়োজনে সঙ্গী হয়েছেন এই কিংবদন্তী। গ্লিটসকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, “মিডিয়াতে আছি বলেই এখনো হয়ত মানুষ আমাকে ডাকে। আসলে এর মধ্যেও একটা আনন্দ আছে। কেউ কোথাও নেই-এই কথাতো বলতে পারি না। বলি, কেউ কোথাও আছে।”

বাঙালির ইতিহাস বদলে দেওয়া একাত্তরেও আছে তার অবদান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কবরী। সেখানে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন।

বর্ণাঢ্য জীবনে রাজনীতিতেও পা রাখেন তিনি। নবম সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ নির্বাচিত হন। কর্মময় জীবন তার এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’। শিক্ষকতার সঙ্গেও জড়ান তিনি। যোগ দেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে। ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে কাজ আর শেষ করা হলো না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com