‘এতবার গুলির সামনে পড়েও বেঁচে আছি’

দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতা দিবস। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা যারা এনেছেন তাদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
‘এতবার গুলির সামনে পড়েও বেঁচে আছি’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হ্যালো কথা বলেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম রেজওয়ান আলীর সঙ্গে। গল্পে গল্পে জানিয়েছেন ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ শে মার্চ কী করছিলেন তিনি।

সেই কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে তুলে ধরা হলো।

মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৮ ও ২ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। রেজওয়ান আলী বলেন, “২৫ মার্চ গণহত্যার কালরাতের আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ মেনে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আওয়ামী লীগের সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে আমরা ছোট ছোট ঘাঁটি গড়ে তুলছিলাম।”

বঙ্গবন্ধুর কাছ স্বাধীনতার ঘোষণা পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখবরও আমরা পেয়েছিলাম। রাত থেকে চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন সাহেব বারবার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু যা বলেছেন সেগুলো জানাচ্ছিলেন। সেই মুহুর্ত থেকেই আমরাসহ দেশের সবস্থানের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।”

২৬ শে মার্চ সকালের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা রাতে বিভিন্ন খবর পেয়েছি যে ঢাকার কোথায় কোথায় আক্রমণ হয়েছে, কেমন মানুষ মারা গেছে। ২৬ শে মার্চ সকাল থেকে আমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া শুরু করে দিলাম, মানুষজনকে ঘরে থাকতে বলতাম। বন্দুক জোগাড় করতে থাকলাম। এছাড়া রাস্তাঘাটে নিয়ে মিছিলও হতো। তখন তো রাজাকার হয়নি তাই কোনো বাঁধা ছিল না।”

তিনি যোগ করেন, “আমরা জানতে পারি ২৫ তারিখে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে জাহাজ খালাস করতে গিয়েছিলেন। উনি ছিলেন পাকিস্তান আর্মিতে বাঙালিদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক। ২৭ তারিখে ১২টার পরে উনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আরেকবার পাঠ করেন। আমার এখনো তা মাথায় পুরোপুরি আছে উনি যা যা বলতেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে উনি এ ঘোষণা দিলে এই খবরটা আরো দেশে ছড়ায় গেল।”

খুলনার তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল জানতে চাইলে স ম রেজওয়ান আলী হ্যালোকে বলেন, “খুলনায় থাকা আর্মিরা তেমন কিছু করত না। মূলত ২৮ তারিখে যে আর্মির দল খুলনায় ঢোকে তারাই খুলনায় যুদ্ধে শুরু করে। ঢুকে প্রথমে ফুলতলায় একজনকে গুলি করে। দৌলতপুরে মহসিন কলেজের মোড়ে আমার চোখের সামনে গুলি করতেছিল। আল্লাহ আমার ভাগ্যে রেখেছিলেন বলে আমি এতবার গুলির সামনে পড়েও বেঁচে আছি। এরপরে শহরে ঢুকে বৈকালি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে আরো কিছু মানুষকে গুলি করে।”

তিনি আরও বলেন, “এরপরে তো মুক্তিযুদ্ধ পুরোদমে শুরু হয়, অনেক ইতিহাস আছে। আমরা খুলনার বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেছি, ক্লিয়ার করে রেখেছিলাম বেশ কিছুদিন। কিন্তু অগাস্টের পরে রাজাকার অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আমরা খুলনা আর ধরে রাখতে পারি নাই। সে সময়ে আমি ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিলাম, বিরাট দলের সাথে দেশে ফিরলাম। ১৭ তারিখে আত্মসমর্পণ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি।"

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com