প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হালখাতা

উন্নয়নে দেশ এগিয়ে গেলেও শিশুর অপ্রাপ্তি পিছু ছাড়েনি। যারা দেশের কর্ণধার তাদের নিয়ে কতটা ভাবি আমরা? প্রাপ্তি নেই তা বলা যাবে না তবে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এমন শিশুর সংখ্যাও কম নয়।
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হালখাতা

বাংলাদেশ নবজাতকের মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে বিশ্বের যে ১০টি দেশে সবচেয়ে বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয়, বাংলাদেশ এখনও সেই তালিকায় আছে৷ ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে মারা যেতো গড়ে ১৪৪ জন৷ সেটি কমে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে গড়ে ৩৪ জন৷ ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ জনে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বাংলাদেশ৷

শিক্ষাতেও রয়েছে অগ্রগতি। বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮%। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে-মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং সমতা তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। সফলতার দিকগুলো হলো - সব শিশুর প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া, শ্রেণিকক্ষে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠা এবং অতি উচ্চ হারে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শেষ করা।

তবে অপ্রাপ্তি বা মন খারাপের বার্তাও আছে। প্রাথমিক স্তরে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষার মান। নিম্নমানের কারণে শিশুরা উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় এবং এক পর্যায়ে ঝরে পড়ে। বিশ্বব্যাংকের একটি জরিপ বলছে, বাংলাদেশের ৬৫% শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারে না। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চাইতেও বেশি। শুধু তাই নয়, ইউনিসেফ আরও বলছে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযুক্ত প্রায় ৬২ লাখ শিশু এখনও শিক্ষার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের বেশীরভাগের বাস শহরের বস্তি বা দুর্গম অঞ্চলে। এদের মধ্যে ৪৬ লাখ শিশুই প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার বয়সী।

সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) ২০১৫ সালে একটি গবেষণা ফল প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, দেশে গত ১০ বছরে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে। ১০ বছর আগে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪৯ লাখ ১০ হাজার, আর বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ২৪ লাখ ৮০ হাজারে।

জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলের ২০১৫ এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিশুর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন কমছে না বরং শিশু হত্যাসহ ধর্ষণ, বলাৎকার এবং শ্লীলতাহানির ঘটনা যেন বেড়ে চলেছে৷ সহিংসতার শিকার এই শিশুদের বড় অংশই নিম্নবিত্ত পরিবারের অথবা গৃহকর্মী৷ র‌্যাবের একটি তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, গত বছরের তিন মাসে সারাদেশে শতাধিক শিশু হত্যার শিকার হয়েছে৷ এর মধ্যে গত আগস্ট মাসে ৩৫, সেপ্টেম্বরে ৪০, অক্টোবর মাসে ২৫ জন শিশু হত্যার শিকার। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব মতে, ২০১৩ সালে অন্তত ১০০ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এঁদের মধ্যে ৩৮ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ২০ জনের বয়স ৭-১২ বছরের মধ্যে৷

বাল্যবিয়ের দিক থেকে আগের তুলনায় উন্নতি হলেও সেটা যে খুব বড় অর্জন তা বলা যায় না। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে বাল্যবিবাহের সব্বোর্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যতম।

১৯৯০ সালে শিশু অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ সনদে (সিআরসি) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। শিশু অধিকার নিশ্চিতে চুক্তিবদ্ধ বাংলাদেশ। নিশ্চিত হোক শিশু অধিকার, লাল সবুজ পতাকার ছায়ায় আনন্দে বেড়ে উঠুক প্রতিটি শিশুই এটিই প্রত্যাশা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com