কালরাত্রি: এক রাতের অভিযানে ‘অর্ধ লক্ষাধিক’ প্রাণহানী

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরিচালিত অভিযানে একরাতে প্রাণহানী হয় ‘অর্ধ লক্ষাধিক’ মানুষের। যে অভিযানটির নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
কালরাত্রি: এক রাতের অভিযানে ‘অর্ধ লক্ষাধিক’ প্রাণহানী

উত্তেজনাপূর্ণ সময় তখন। গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভের নগরী ঢাকা। আর ২৫ মার্চ সকালে পরিস্থিতি হয়ে যায় থমথমে। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে ভিড়। বাঙালি অপেক্ষা করছিল নেতার নির্দেশের অপেক্ষায়। বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

বিকাল থেকেই পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টারে টহল দিতে থাকে। সামরিক সদস্যদের অপারেশনের জন্য প্রস্তুত থাকার বার্তা দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কোনো ঘোষণা ছাড়াই গোপনে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যান। দিকে দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ইয়াহিয়া ‘ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান পালিয়ে গেছে’। বাঙালি বুঝে ফেলে- কিছু একটা ঘটবে। রাতেই পথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা এবং গড়ে তোলে অসংখ্য ব্যারিকেড।

রাত ১০টার দিকে ঢাকা সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি বড় কনভয় যুদ্ধ সাজে শহরের দিকে রওনা হয়।মুক্তিকামী জনতার কাছ থেকে তখন স্লোগান উঠছিল ‘জয় বাংলা’। গুলি করে ট্যাংকগুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। রাত ১১টা ২০ মিনিটের মধ্যেই সেনাদের একটি অংশ রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের চারিদিকে অবস্থান নিতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় গুলি। ব্যারাকে অবস্থানরত বাঙালি পুলিশ সদস্যরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করে। সমগ্র ঢাকাতে শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বোমা আর ট্যাংকের আওয়াজে প্রকম্পতি পুরো শহর। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, এবং বস্তিবাসীর ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালায়।

রাত ১টার পর পাকিস্তানের সেনারা ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান নিয়ে ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অনেকেই আত্মগোপনে যেতে বললেও বঙ্গবন্ধু যাননি।

তিনি বলেছিলেন, “আমাকে না পেলে ওরা ঢাকা জ্বালিয়ে দেবে।”

গণহত্যার সেই রাতে সেনাবাহিনী অগ্নিসংযোগ করে দৈনিক ইত্তেফাক, পিপলস, গণবাংলা ও সংবাদ-এর কার্যালয়ে।

সেই রাতে পাক বাহিনী নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম যে হত্যাযজ্ঞ চালায় পৃথিবীর ইতিহাসে তেমন ঘৃণ্য গণহত্যার নজির খুব বেশি নেই। ২৫ মার্চকে ‘কালরাত্রি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২০১৭ সাল থেকে দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করছে বাংলাদেশ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com