নারী দিবসের এপিঠ ওপিঠ

এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল 'নারী নেতৃত্ব: কোভিড পরবর্তী জীবনে গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব।'
নারী দিবসের এপিঠ ওপিঠ

বিশ্বব্যাপী সব ক্ষেত্রে নারীর সমতা আদায়ের লক্ষ্যে ১৯১১ সাল থেকে নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। সেই অনুযায়ী ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ  পূরণ হয়েছে। এবছর ১১০তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

এ দিবসের সূচনার পেছনের গল্প যেমন মসৃণ ছিল না তেমনি দিবসটির ১১০তম বর্ষেও নারীদের অবস্থান খুব বেশি উন্নত নয়। সমতার সূচকগুলোতে এখনও নারীরা পিছিয়ে।

১৮৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেমেছিলেন। তারা উত্তম মজুরি, কর্মঘণ্টা হ্রাসকরণ এবং  নারীদের ভোটাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে আন্দোলন করেন। তাদের ওপর সরকারের হামলা চলে। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম নারী সম্মেলন হয়। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন । এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন যা পরের বছর ১৯১১ সাল থেকে পালনের সিদ্ধান্ত হয় । এ ঘোষণার পর ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো জার্মান, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ও সুইজারল্যান্ডের এক মিলিয়নের বেশি মানুষ নারী দিবসের শোভাযাত্রায় যোগ দেয় ।

জাতিসংঘ  ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। নারী অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস অন্য বছরের তুলনায় ভিন্ন। বিশ্ববাসী মহামারি পরবর্তী জীবনের সাথে সংগ্রাম করছে। নারীদের অবস্থা আরও বেশি শোচনীয়।  মহামারি লিঙ্গ বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছে। নারীদের আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক অনিরাপত্তার অনিশ্চয়তা বেড়েছে। জাতিসংঘের সমীক্ষা বলে  বিশ্বের মাত্র ২২ দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে নারী রয়েছে এবং জাতীয় সংসদে তাদের হার মাত্র  ২৪.৯ %।

বর্তমান অগ্রগতির হারে সরকার প্রধানদের মধ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জনে আরও ১৩০ বছর লাগবে।  সাতাশিটি দেশ নিয়ে কোভিড-১৯ টাস্ক টিমের বিশ্লষণ  অনুযায়ী মাত্র ৩.৫ % নারী সমতা পেয়েছে মহামারির সময়ে। মহামারিতে নারীরা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে তারা তাদের পুরষ সহকর্মীর চেয়ে ১১% কম সম্মানী পেয়েছে।

মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব ধীরে ধীরে ধ্বংসাত্মক মহামারির আঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অবশেষে মেয়েদের বাদ দেয়া এবং তাদের প্রান্তিককরণের অবসান ঘটানোর সুযোগ এসেছে এবং এখনই এ পদক্ষেপ নেওয়ার সবচেয়ে সঠিক সময়। এজন্য দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীতে বিদ্যমান নারীর উন্নয়ন রোধকারী ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, আর্থ-সামাজিক বাধাগুলো দূর করতে হবে। নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

আশার কথা হলো সব বাঁধা পেরিয়ে নারীরা এগিয়ে চলছে। নারীদের তরুণ প্রজন্ম জলবায়ু পরিবর্তন, সবুজ পৃথিবি গড়া,  বিশ্বের শান্তি রক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। মহামারিতে নারীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন।

আমরা হয়তো আর কোভিড-১৯ এর আগের পৃথিবীতে ফিরতে পারব না তাই বর্তমান সময়ে বিশ্বকে উন্নত করতে আমাদের আরও ভালো ভাবে ভিন্ন এবং উন্নত  কিছু করতে হবে অর্থাৎ নারী এবং মেয়েদেরকে পিছিয়ে রাখছে যে বাধাগুলো সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস সময় এবং পৃথিবীবাসীর  কাছে অনেক বেশি করে সমতার আবেদন জানাচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য  নারী নেতৃত্বের শক্তিকে সুসংহত করার সময় এসেছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com