বয়ঃসন্ধিকাল: পরিবারের ভুমিকা (ভিডিওসহ)

একজন মানুষের জীবনে বেড়ে ওঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল বয়ঃসন্ধিকাল।
বয়ঃসন্ধিকাল: পরিবারের ভুমিকা (ভিডিওসহ)

কিশোর-কিশোরী থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সাধারণত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সকেই বয়ঃসন্ধিকাল হিসেবে ধরা হয়৷

এ সময়ে শরীর আর মনের এই পরিবর্তনের কারণে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের অনুভূতিকে ঠিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না৷

বাংলাদেশে এখনও বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যাগুলো নিয়ে সরাসরি পরিবারের মধ্যে কথা বলার মতো মানসিকতা তৈরি হয়নি৷ প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে কাউন্সেলিং ইত্যাদির মতো বিষয়ে অনেক পরিবারই অবগত নন।

সচেতন হওয়া জরুরী: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়েরা ভীষণ কৌতূহলপ্রবণ হয়ে থাকে। এসময়ে বাবা-মায়ের কোনো অসাবধানতা কিংবা অসচেতনতার কারণেই সন্তান জড়িয়ে পড়তে পারে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে। তাই এসময় পরিবারকে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।

ভালো-মন্দের ব্যবধান বোঝানো: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়ের মধ্যে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা তৈরি হয়ে থাকে। নিজের চিন্তায় আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় যা অনেকসময় বিপথগামী হয়ে ওঠে। বকাঝকা না করে তার পছন্দ, অপছন্দের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে। সন্তানের আত্মসম্মানে আঘাত না দিয়ে ভাল-মন্দের ব্যবধানটা বোঝাতে হবে।

শারীরিক শাস্তি থেকে বিরত থাকুন: অন্যায় যতই গুরুতর হোক না কেন, শিশুদের গায়ে হাত তুলবেন না। মনে রাখবেন, শারীরিক প্রহার একটি শিশু বা কিশোরের সারাজীবনে মানসিক ক্ষত হিসেবে থেকে যাবে।

সন্তানকে ছোট করে কথা বলবেন না: পড়াশোনায় সামর্থ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তুলনা করা একদমই উচিৎ নয়। তার অর্জিত ফলাফল নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে অযথা চাপ সৃষ্টি করবেন না। এই পরিস্থিতিতে অনেক কিশোর-কিশোরীই আত্মহত্যার মত ভয়াবহ পথ বেছে নেয়।

সন্তানকে উৎসাহ দিন: বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলোতে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি তার নিজের কাজগুলোর প্রতি দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলুন। শিশুদের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে যাবেন না। তবে তারা কী করছে, কাদের সাথে মিশছে সেটা জানতে তার সাথে মন খুলে কথা বলতে হবে। তা না হলে তারা বাবা মার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটা হারিয়ে ফেলবে।

সন্তানের পুষ্টির দিকে নজর রাখুন: ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালে বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে অপুষ্টিতে ভোগে। তাই এই সময় ছেলে মেয়ে উভয়কে, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, জিংক, আয়োডিন, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন, শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা। এছাড়াও সৃজনশীল কাজের পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

সন্তানের বন্ধু হতে হবে: ছেলে-মেয়েদের মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে উদার মনোভাবসম্পন্ন হয়ে খোলামেলা কথা বলুন। নারীদের কী কী পরিবর্তন হয়, পুরুষদের কী কী পরিবর্তন হয় তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। এ সময়ে হরমোনজনিত কারণে দ্রুততার সাথে ঘটতে থাকা শরীরের পরিবর্তনগুলো নিয়ে তাদের বিব্রত হয়ে পড়া বেশ পীড়াদায়ক। কিন্তু তাদের আশ্বস্ত করতে হবে, এটাই বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যা ঘটছে তা-ই হওয়ার কথা। 

বয়ঃসন্ধিকালের মত ঝুঁকিপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে শিশুর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার মা-বাবাকে, পরিবারকে৷  পরিবারের সঠিক এবং কৌশলী ভূমিকাই পারে সন্তানকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com