দেশের ৩৭ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার (ভিডিওসহ)

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) এর মতে অপুষ্টির অর্থ হলো, একজন ব্যক্তির পুষ্টি গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘাটতি বা ভারসাম্যহীনতা।
দেশের ৩৭ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার (ভিডিওসহ)

অপুষ্টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অপুষ্টির লক্ষণগুলি হলো, অস্বাভাবিকভাবে দেহের ওজনের পরিবর্তন, ক্লান্তি, কাজকর্মে অক্ষমতা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলিত উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি-২০১২ শিরোনামে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৩৭ শতাংশ শিশু এখনো অপুষ্টির শিকার। তাদের দৈহিক উচ্চতাও বয়স অনুপাতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত এই শিশুদের অপুষ্টির নেতিবাচক প্রভাব তাদের পরবর্তী জীবনেও থাকবে তা বলা যেতেই পারে।

১। আয়রনের চাহিদা ও করণীয়: শিশুর শরীরে আয়রনের মাত্রা সঠিক পরিমাণে না থাকলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। রোগের আক্রমণ সহজেই শিশুকে সংক্রমিত করতে পারে সে সাথে শিশুকে করে দেয় দুর্বল। মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিশুরা দ্রুতই হাঁপিয়ে ওঠে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে শিশুকে। আয়রনের ঘাটতি পূরণে আমিষজাতীয় খাবার যেমন মাছ-মাংস খাওয়াতে হবে। আয়রন গ্রহণের সক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার যেমন লেবু নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে।

২। আয়োডিনের চাহিদা ও করণীয়: শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সচল রাখতে থাইরয়েড হরমোন নানাভাবে ভুমিকা নিয়ে থাকে। তবে, শরীরে যদি আয়রনের অভাব থাকে তাহলে থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয় এবং হাড়ের স্বাভাবিক গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে শিশুরা সব থেকে বেশি ঝুঁকির মুখে। তাই, আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয় এমন খাবার যেমন মাছ, ডিম, দই ইত্যাদি খাবার রাখতে হবে নিয়মিত খাদ্য তালিকায়।

৩। ভিটামিন-ডি’র চাহিদা ও করণীয়: রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে দেহের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর অভাবে ‘রিকেট’ নামক রোগ হতে পারে। নানাপদের চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম- ইত্যাদি খাবারের পাশাপাশি টাটকা রোদ থেকেও পাওয়া যাবে ভিটামিন ডি।

৪। ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা ও করণীয়: শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকল এবং রক্তস্বল্পতার অন্যতম কারণ হল ভিটামিন-বি১২র ঘাটতি। এই ভিটামিন নতুন রক্ত তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখতে ভিটামিন-বি১২’এর কোনো বিকল্প নেই! সমস্যা হলো, আমাদের শরীর নিজে থেকে এই ভিটামিন তৈরি করতে পারে না। সেকারণেই প্রয়োজনীয় খাবার এবং সাপ্লিমেন্টের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই প্রাণীজ খাবার যেমন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন।

৫। ক্যালসিয়ামের চাহিদা ও করণীয়: হাড় এবং দাঁতের সুরক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে ক্যালসিয়াম। শৈশবে ক্যালসিয়ামের অভাব শিশুদের নানা সমস্যার কারণ। ‘রিকেট’ রোগের আরেকটি কারণ হলো ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। এটি হৃদযন্ত্র, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণে মাছ হতে পারে আদর্শ পরিপূরক। দুধ এবং গাঢ় সবুজ শাক-সবজিও মেটাতে পারে ক্যালসিয়ামের চাহিদা।

৬। ভিটামিন-এ’র চাহিদা ও করণীয়: দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে ভিটামিন-এ’র কোনো বিকল্প নেই। এই ভিটামিনের অভাবে আজীবনের জন্য চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও সুন্দর ত্বক, ঝকঝকে দাঁত আর সবল হাড়ের জন্য ভিটামিন এর পূর্ণতা প্রয়োজন। গাঁজর, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, পালংশাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ।

৭। ডিএইচএর চাহিদা ও করণীয়: ডিম, মাছ, দই, পিনাট বাটার ইত্যাদি খাবারের ভেতর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ডিএইচএ। যা শিশুর মস্তিষ্ককে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির মধ্যে একটি। শিশু জন্মের আগের তিন মাস এবং পরবর্তী দুবছরের মধ্যেই শিশুর মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ ঘটে। যার পুরোটাই নির্ভর করে খাবারের উপর।

শুধু ক্ষুধা মেটানোর মতো খাদ্য পেলেই চলে না, একটি জাতির সামনে এগিয়ে চলার জন্য তার মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য প্রয়োজন। সবার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই অগ্রগতি সম্ভব।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com