২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এ এলাকার যুব সমাজ সংঘটিত হতে শুরু করে। মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শরীরচর্চা শিক্ষক নিরঞ্জন সাহার তত্ত্বাবধানে চলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। কেউ কেউ কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। এছাড়া গঠন করা হয় সংগ্রাম পরিষদ।
৩ এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে পৌঁছার পর ইপিআর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার সম্মুখীন হয়। এরপর চলে তুমুল প্রতিরোধ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ২২ ইপিআরসহ ১০৭ বাঙালি নিহত হন এবং প্রায় তিনশ পাকসেনা হতাহতের ঘটনা ঘটে।
৩ এপ্রিলের যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী মির্জাপুর থানা ও সার্কেল অফিসে ঘাঁটি গেড়ে এলাকায় জ্বালাও পোড়াও এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করে।
৭ মে হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় দোসররা মির্জাপুর গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ ৩১ বাঙালিকে হত্যা করে। গুলি করে হত্যা করা হয় দেশ প্রেমিক মাজম আলীকে এবং ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের বাবা জয়নাল সরকারকে।
নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুরকে পাক হানাদার মুক্ত করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবার তাদের দখলে চলে যায়। এরপর কাদেরিয়া বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার শাহ আজাদ কামাল, মো. একাব্বর হোসেন ও শহিদুর রহমান, রবিউলসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধারা অভিযান চালিয়ে ১৩ ডিসেম্বর মির্জাপুরকে পাক বাহিনীর দখল মুক্ত করে এবং তৎকালীন সিও অফিসে (বর্তমানে ইউএনও অফিস ) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছরের মত এবারও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা আয়োজনে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়। শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সভা হয়।
আলোচনা সভায় সংসদ সদেস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেন বলেন, “আমরা যারা মির্জাপুরে যুদ্ধ করেছি তারা জানি মির্জাপুরে চারশ এর বেশি মুক্তিযোদ্ধা হবে না। কিন্তু সেখানে এখন নয়শ মুক্তিযোদ্ধা। আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। কখনো ভাবিনি জীবিত ফিরে আসতে পারব। খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি অমুক্তিযোদ্ধারা ভাতা নেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন তারা লাফালাফি করেন তখন লজ্জা লাগে।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুর রহমান শহিদসহ অনেকেই আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেন, থানা অফিসার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিন, উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।