রোকেয়া এক প্রদীপ

বাঙালির আধুনিক যুগের ইতিহাসে যে নারীর নাম গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় তিনি হলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
রোকেয়া এক প্রদীপ

তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের অবহেলিত নারী সমাজকে সামাজিক মূল্যায়ন করার জন্য দুর্বার সংগ্রাম করেছেন।

বাঙালি সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কারে ঢাকা ছিল, সেই সময় রোকেয়া ছিলেন মুসলিম নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ।

বেগম রোকেয়া সম্পর্কে স্কুল জীবনে স্বল্প ভাবে জানলেও উচ্চ মাধ্যমিকে কলেজের বাংলা প্রভেষক সুফিয়া সুলতানা তন্নি ম্যাম ক্লাসের পাঠ 'চাষার দুক্ষু' পড়াতে গিয়ে বেগম রোকেয়ার সম্পর্কে আলোচনা করেন। যার ফলে বেগম রোকেয়াকে বিশদভাবে জানতে পারি এবং পরবর্তীতে বেগম রোকেয়ার রচনা সমগ্র যা তার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত সব লেখা নিয়ে সংকলিত হয়েছে তা পড়ার পর খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও আলোর দিশারী এই মহীয়সী নারীকে ভালো ভাবে আবিষ্কার করি।

উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠা এই নারী ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবার নাম জহির উদ্দিন আবু আলী হায়দার সাবের যিনি একজন সম্ভ্রান্ত ভূ-স্বামী ছিলেন। তার মা রাহাতুন্নেছা চৌধুরী।

তার প্রকৃত নাম রোকেয়া খাতুন বৈবাহিক সূত্রে নাম বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। রোকেয়ারা ছিলেন তিন ভাই ও তিন বোন।

বেগম রোকেয়ার পিতা বহু ভাষায় সুপণ্ডিত হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন বেশ রক্ষণশীল। বড় ভাই বোনের সাহচর্যে রোকেয়া বাংলা ও ইংরেজি ভালো ভাবে রপ্ত করেন এবং জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন।

১৮৯৮ সালে ১৮বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় বিহারের ভাগলপুরের অধিবাসী খানবাহাদুর সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে যিনি পেশায় একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বিয়ের পর রোকেয়া দু কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কিন্তু তাদের একজনও বাঁচেনি। ফলে পরবর্তী জীবনে এই বৈরী কুসংস্কার আচ্ছন্ন সমাজের বিরুদ্ধে রোকেয়াকে সংগ্রাম করতে হয়েছে নানাভাবে। সে সময় তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে ছিলেন তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন।

পরবর্তীতে স্বামীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় জ্ঞান অর্জনের পথ অধিকতর সুগম হয় এবং তিনি সাহিত্য চর্চাও শুরু করেন।

১৯০২ সালে 'পিপাসা' নামে একটি বাংলা গল্প লিখে প্রথম সাহিত্য জগতে পা রাখেন তিনি। ১৯০৯ সালে স্বামী সাখাওয়াত হোসেন মারা যান। এর পাঁচ মাস পর রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল নামে ভাগলপুরে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এর ছাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র আট জন।

শিক্ষাবিমুখ মুসলমান মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হিসেবে গড়ে তুলার জন্য মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করেন এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেন।

চার বছরে ওই স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হয় ৮৪ জন। ১৯৩০ সালে এটি হাই স্কুলে পরিণত হয়।

১৯১৬ সালে মুসলিম নারীদের সচেতনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন 'আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম' প্রতিষ্ঠা করেন।

সমাজের কুসংস্কার ও জড়তা দূর করতে তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও হৃদয়গ্রাহী গদ্য রচনা করেন। তাই বেগম রোকেয়াকে বাংলা গদ্যের বিশিষ্ট শিল্পী বলা হয়। তার সব রচনায় সমাজ জীবনের গভীর উপলব্ধি থেকে উৎসারিত। মতিচুর ও অবরোধবাসিনী তার তাৎপর্যপূর্ণ গদ্যগ্রন্থ।

নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখেও তিনি তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নারী শিক্ষার লক্ষ্য কাজ করে গেছেন।

১৯৩২ খিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর মাত্র ৫২বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারীর বেগম রোকেয়ার স্মরণে ৯ ডিসেম্বর দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com