নবজাতকের জীবন রক্ষায় করণীয় (ভিডিওসহ)

বিশ্বের সর্বোচ্চ নবজাতক মৃত্যু-কবলিত দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার কমানোর বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন করে উন্নয়ন আইকন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ।
নবজাতকের জীবন রক্ষায় করণীয় (ভিডিওসহ)

বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর কারণ এবং মৃত্যুঝুঁকি কমানোর উপায় নিয়ে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের সাথে কথা বলেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক।  তার সাক্ষাৎকারটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।

"অপরিপক্ক ও কম ওজনের শিশু যাতে জন্মগ্রহণ না করে, সেদিকে নজর দিতে হবে। এবং জন্মের পর তাদের বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে মাকে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে রাখতে হবে। কম পক্ষে চার বার চেক আপের থাকার কথা। এই সময়ে যদি অপরিণত বা অপরিপক্ক শিশু জন্মের সম্ভাবনা দেখা দেয়, তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ হাসপাতাল বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেখানে এই সব অপরিপক্ক শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে সেখানে যেতে হবে। নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটা প্রসবই হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে করতে পারলে ভালো। যদি একান্তই সম্ভব না হয়, তাহলে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ধাত্রীর মাধ্যমে এই ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে।

"গর্ভকালীন মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় আয়রন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টেশন দিতে হবে। টিটেনাসের টিকা দিতে হবে। নবজাতকের যেন ইনফেকশন বা সেপসিস না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তাকে বেশি বেশি স্পর্শ করা যাবে না। প্রতিবার স্পর্শ করার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

"শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মায়ের দুধ ছাড়া শিশুকে অন্য কিছু দেওয়া যাবে না। মায়ের বুকের দুধ ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।

"নবজাতকের নাড়ির ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে হলে জীবাণুমুক্ত ব্লেড বা কাচি দিয়ে নাড়ি কাটতে হবে। জীবাণুমুক্ত সুতা বা ক্লিপ দিয়ে নাড়ি বাঁধতে হবে এবং নাড়িতে ৭.১% কোরেক্সিডিন লাগাতে হবে। নাভিতে অন্য কোনো কিছু লাগানো যাবে না।"

তিনি আরো বলেন, "করোনাভাইরাসের এই সময়ে নবজাতককে সুরক্ষা দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতককে সুরক্ষা দিতে হলে শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মা যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্তও হোন, তাহলেও বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এই সময়ে নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যাতে তার নাক ও মুখ ঢাকা থাকে। দুধ খাওয়ানোর পূর্বে মাকে সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। নবজাতককে যত কম লোক স্পর্শ করে তত ভালো।"

তিনি জানান, গ্রামাঞ্চলে নবজাতকের মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এই হার প্রায় প্রতি হাজারে ৩৩ জন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে এই হার প্রতি হাজারে ৪২ জন। বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অপরিপক্ক ও কম ওজনের নবজাতকই প্রধান। প্রায় ৩০% নবজাতক এই কারণেই মারা যায়। নবজাতক মৃত্যুর অন্যন্যা কারণগুলোর মধ্যে জন্মের সময় জটিলতা ২৩%, সেপসিস বা ইনফেকশন ২০%, জন্মগত ত্রুটি ১৩% এবং অন্যন্যা প্রায় ৭%।

অপরিণত জন্মের যে সকল কারণ জানা গেছে তার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো - কিশোরী মাতা, মায়ের অপুষ্টি, মায়ের শরীরে ইনফেকশন, ইমমেচিউর বাচ্চার মেমব্রেন, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। অপরিণত শিশুর জন্ম কমাতে হলে বাল্য বিবাহ নিরুৎসাহিত করতে হবে।

তিনি বলেন, "কম বয়সে বাচ্চা নেওয়াটাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তাকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন বা আমিষসহ সুষম খাবার দিতে হবে এবং স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি খাবার দিতে হবে। মায়ের জ্বর বা অন্য কোন ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।"

গর্ভকালীন অধিক পরিশ্রমের কোনো কাজ না করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। রক্তচাপ যাতে নিয়ন্ত্রিত থাকে এজন্য রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তন করা লাগতে পারে।

অপরিণত শিশু জন্ম হয়ে গেলে তাকে বাঁচাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। নবজাতকের জন্য বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র বা স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিট যে সব জায়গায় আছে, সে সব জায়গায় ভর্তি ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আগে থেকেই এই সব প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়।

যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার নামে বিশেষ ব্যবস্থা আছে সেটা নেওয়া যেতে পারে। এইটা হলো এক বিশেষ ব্যবস্থা যেখানে শিশুকে মায়ের বুকে আগলে রাখতে হয়। মা আর সন্তানের মধ্যে স্কিন টু স্কিন কন্ট্যাক্ট হবে এখানে। শুধু মা নন, এই সময়ে যে কেউ শিশুকে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার দিতে পারে। এটা হতে পারে শিশুর বাবা, নানি, দাদি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com