তার জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুস সোবহান এবং মার নাম কুলসুম বেওয়া। তার স্বামীর নাম আবদুল মজিদ।
যুদ্ধের সময় তিনি তার নিজ গ্রাম কুড়িগ্রামে ছিলেন। যা ১১ নং সেক্টর হিসাবেও পরিচিত ছিল। মাধবপুর গ্রামের পাশের ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা 'মুহিব হাবিলদার' নামক এক মুক্তিযোদ্ধার কথায় উৎসাহ পেয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে৷
মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প দশ ঘরিয়ায় রান্নাবান্না করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু প্রথম দিকে তারামন বিবির মা এই বিষয়ে রাজি না হলেও পরে তিনি রাজি হোন।
তবে তারামন বিবির সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়ার পর তাকে সেখান থেকে অস্ত্র পরিচালনা করার জন্যও প্রস্তুত করা হয়।
যুদ্ধের সময় তিনি পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতেন। এছাড়াও বেশ কয়েকবার নানা পন্থা অবলম্বন করে শত্রুপক্ষের গোপন খবর ও তাদের পরিকল্পনা জানার জন্য যেতেন পাকিস্তান বাহিনীর শিবিরে।
কখনো শরীরে কাদা মাটি, কখনো চক, কালি কখনো পাগল কিংবা প্রতিবন্ধী, পংগু সেজে শত্রুপক্ষের গোপন খবর ও পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। খবর পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিবাহিনীর অস্ত্র লুকিয়ে রাখতে তিনি সাহায্য করতেন।
যুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য 'বীর প্রতিক' উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক তাকে প্রথম খুঁজে পান। ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসা নেওয়ার পরও দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট আর ডায়েবেটিসে রোগে ভুগছিলেন তারামন বিবি।
২০১৮ সালের ১লা ডিসেম্বর ৬২ বছর বয়সে এই মহীয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়৷