টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কাঠুরি শিব মন্দিরের পাশে অবস্থান এই দৃষ্টিনন্দন উপেন্দ্র সরোবরের।
জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ছয়শত ৭৮ বছর আগে ১৩৪১ সালে তৎকালীন নাগরপুরের জমিদার রায় বাহাদুর সতীশ চৌধুরী তার বাবা উপেন্দ্র মোহন রায় চৌধুরীর নামানুসারে ১১ একর জমির ওপর এ সরোবর খনন করেছিলেন।
উপেন্দ্র সরোবরের চারপাশ জুড়ে ১২টি সুপ্রশস্ত শান বাঁধনো ঘাট রয়েছে যার কারণে স্থানীয়দের কাছে এই স্থানটি ‘বার ঘাটলা দীঘি’ নামেও পরিচিত। স্বচ্ছ পানি নিশ্চিত করার জন্য সরোবরের তলায় রয়েছে ছয়টি সুগভীর কূপ বা কুয়া।
তবে প্রচলিত আছে, এক জোৎস্না রাতে জমিদার রায় বাহাদুর তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে নিজের বৈঠকখানায় জোৎস্না দেখছিলেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন রাতের আঁধারে তার এলাকার কিছু মানুষ দূরে বিল থেকে পানি নিচ্ছে। পরে তিনি খবর নিয়ে জানতে পারলেন যে, তার এলাকার প্রজারা সুপেয় পানির কষ্টে রাতে পানি সংগ্রহ করেন। এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত ও মর্মাহত হয়ে সরোবরটি খনন করার উদ্যোগ নেন।
সরোবরের পশ্চিম পাশে প্রধান ঘাট সংলগ্ন বিশাল বট গাছ আর দিঘির চারপাশে রয়েছে খেঁজুরসহ সারি সারি কাঠ গাছ। দিনের অধিকাংশ সময় হরেক রকমের পাখির মিষ্টি ডাক আর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে এ সরোবর।
আর গাছের বিস্তির্ণ ছা০য়া আর শীতল বাতাস গ্রীষ্মকালে ভ্রমণপিপাসু ও স্থানীয়দের হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। এ জেলার মানুষের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের এটিই একমাত্র স্থান। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিটি পার্বণে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভিড় করেন উপেন্দ্র সরোবরে।
তবে কালের বির্বতনে জৌলুস হারাতে বসেছে শত শত বছরের ঐতিহ্যের উপেন্দ্র সরোবর। সরোবরটির চারপাশের বাধে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং ১২টি ঘাটের প্রায় বেশির ভাগ ঘাটই ভাঙা। আর দীঘির পাড় ঘেঁষে জন্মেছে অসংখ্য আগাছা।
আর সেই পুরানো কাঠুরি শিব মন্দিরটির অবস্থাও এখন বিলীনের পথে। উপেন্দ্র সরবোর রক্ষায় প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় ও ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।