নাগরপুর জমিদার বাড়ি (ভিডিওসহ)

নেই পাইক পেয়াদা, সেনাপতি আর মন্ত্রীর হাঁক। নেই কোনো জমিদার তবে কালের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে শত শত বছরের স্মৃতিবহন করা নাগর পুর জমিদার বাড়ি।
নাগরপুর জমিদার বাড়ি (ভিডিওসহ)

জমিদার বাড়ির দেয়ালগুলো তার সোনালী অতীতের কথা জানান দিতে দ্বিধা করছে না একটুও। আর তার অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বলছিলাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর শত বছরের ঐতিহ্য বহন করা টাঙ্গাইলের নাগরপুর জমিদার বাড়ির কথা। 

জানা যায়, জমিদার সুবিদ্ধা খাঁ-র হাত ধরে নাগরপুরে চৌধুরী বংশ জমিদারি শুরু করেন। এই বংশের প্রথম পুরুষ যদুনাথ চৌধুরী প্রায় ৫৪ একর জমিতে তার জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। 

তার পরবর্তী সময়ে জমিদারির হাল ধরেন তার তিন ছেলে উপেন্দ্র মোহন চৌধুরী, জগদীন্দ্র মোহন চৌধুরী, শশাঙ্ক মোহন চৌধুরী।

তবে নাগরপুরের জমিদার বাড়ির সুখ্যাতি ছড়ায় তৃতীয় পুরুষ উপেন্দ্র মোহনের ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীর শাসন আমলে। প্রজা সাধারণের  জন্য বিভিন্ন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করেন। তার ছোট ভাই সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী কোলকাতায় ব্যবসা ও শিল্প সামলাতেন। ছোট ভাই সুরেশ ছিল সৌখিন, সংস্কৃতিমনা ও অত্যন্ত ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। তার হাতে ধরে তৎকালীন কলকাতায় গড়ে ওঠে পূর্ব বাংলার ফুটবল ক্লাব 'ইস্ট-বেঙ্গল'। সুরেশ চন্দ্র নাগরপুরকে তৎকালীন রাজধানী কলকাতার আদলে সাজাতে চেয়েছিলেন। 

তখন বাড়িটির রঙ্গমহলের পাশে এক সুদৃশ্য চিড়িয়াখানা ছিল। সেখানে শোভা পেত- ময়ূর, কাকাতোয়া, হরিণ, ময়না আর শেষ দিকে সৌখিন সুরেশ চৌধুরীর ইচ্ছায় চিড়িয়াখানায় স্থান করে নিয়েছিল বাঘ এবং সিংহও। 

৫৪ একরের এই জমিদার বাড়িটিতে বেশকিছু দুই ও তিন তলা ভবন রয়েছে।

ভবনগুলোর বেশির ভাগই ধ্বংসের পথে। বর্তমানে কয়েকটি ভবনে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে দেখা গেছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তিনটির মধ্য রং মহল বর্তমানে নাগরপুর মহিলা কলেজ ক্যান্টিন হিসাবে তিনটি ব্যবহার হচ্ছে। আর ঝুলান দালান শিক্ষকদের কক্ষ,

লাইব্রেরি এবং ক্লাস রুম। আরেকটি ভবনে কেবল শুনশান নীরবতা। 

এই বাড়ির অন্যতম স্থাপনা হলো ঝুলন দালান। প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন শিল্প কর্মে মণ্ডিত এই ভবনে চৌধুরী বংশের নিত্যদিনের পূজা অনুষ্ঠিত হতো। বিশেষ করে বছরে শ্রাবণের জ্যোৎস্না তিথিতে সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নাটক, যাত্রার আসর হতো। অট্টালিকাটির অভ্যন্তরের পুরো কাজটি সুদৃশ্য শ্বেত পাথরে গড়া। আর এখানেই চৌধুরী বংশের শেষ প্রতিনিধি মিলন দেবী নিরাপত্তাহীনতায় দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। 

ঝুলন দালানের ছাদ থেকে সামনে চোখ রাখলেই দেখা মিলবে বিশাল দিঘি আর তার ওপারে স্বমহিমায় শৈল্পিক কারুকাজ খচিত স্থাপনার নাম ঘোড়ার দালান।

জমিদারী পরিচালনা এবং বাবসায়িক প্রয়োজনে চৌধুরী বাড়িতে সুঠাম সুদৃশ্য ঘোড়া পোষা হতো। আর এই ঘোড়া এবং তার তদারকিতে নিয়োজিতদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয় বিশাল ভবন। যা জমিদারদের ঘোড়ার দালান হিসাবে পরিচিত।

১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর পাকিস্তান সরকার চৌধুরী বাড়ির সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে চৌধুরী বাড়ির মূল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগরপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ।

স্থানীয়রা মনে করেন, বাড়িটি সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়া হলে বাচাঁনো সম্ভব হবে শত শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com