জেলে জীবনের নিরাপত্তা কতটুকু!

জেলার চরফ্যাশনে আমার বাড়ি। প্রকৃতির আগ্রাসী রুপ জেলেদের জীবন কীভাবে থমকে দেয়, তা বেশ কাছ থেকেই দেখেছি।
জেলে জীবনের নিরাপত্তা কতটুকু!

বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় ২০ জেলার একটি ভোলা। সাগর তীরবর্তী চরফ্যাশনের চর কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর তাড়ুয়া ও মনপুরা দ্বীপ-এসব এলাকা প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করছে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের জনপদ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের জেলেরা।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিবেদন ‘অ্যা গ্যাদারিং স্টর্ম’-এ  উঠে এসেছে উপকূলের ভয়াভহতার চিত্র।

কয়েকটি পত্রিকার খবরে দেখলাম, ভোলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে মোট জেলের সংখ্যা দুই লাখ। এসব জেলেদের অনেকেই সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়। তাদেরকে যেতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে দুর্যোগে জীবন রক্ষার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

জেলেদের সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়েছে। বোঝার চেষ্টা করেছি তাদের জীবনের গতি-প্রকৃতি। সমুদ্রগামী ট্রলারে ২০ জনের মতো জেলে থাকে। কিন্তু কোনোটিতেই দুর্যোগ মোকাবেলার সরঞ্জাম নেই। কোনো কারণে ট্রলার ডুবে গেলে জীবন রক্ষায় ভেসে থাকার একমাত্র অবলম্বন জালের পুলুট। কিন্তু বড় একটি পুলুটের সাহায্যে ভেসে থাকতে পারে ৭-৮ জন। বাকিদের জীবনে কী আছে, তা বলা যায় না।

অন্যদিকে জেলেদের অসচেতনতায় প্রতিনিয়ত ঝরে যায় তাজা প্রাণ। প্রতিবছরই মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারান অনেকে।

আমার প্রতিবেশী জেলেও মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের কেউ কেউ জীবিত ফিরলেও অনেকে ফিরে আসেন লাশ হয়ে। আর জীবিত ফেরাদের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনলে যে কেউই থ লেগে যাবে।

আমার একটা ব্যক্তিগত কৌতূহল ছিল, প্রতিকূল আবহাওয়াতেও কেন তারা মাছ ধরতে যান? এ নিয়ে সিডু মাঝি নামে এক জেলের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। তিনি আমাকে জানান, ঋণের বোঝা আর পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা ভাত তুলে দিতে জীবনের ঝুঁকি নেন জেলেরা।

তিনি বলেন, "সাগরে যাই অনেকদিনের জন্য, কিন্তু দুর্যোগে কোনো নিরাপত্তা পাই না। আমাদের জন্য কিছু বয়া বা লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করলে একটু নিরাপত্তা পাইতাম।"

কীভাবে দ্রুত ও সঠিক আবহাওয়ার তথ্য জানা যাবে, দুর্যোগে কী কী করতে হবে-তা নিয়ে প্রশিক্ষণও চাচ্ছেন জেলেরা।

তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অন্য এক জগতের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। এই মৎস্যজীবীরা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করেন। তাদের প্রতি আমাদের দায় রয়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশেই মৎস্য শিল্পের বেশ কদর রয়েছে। এর পেছনে যারা কাজ করেন, আমরা তাদের পাশে থাকলে তারা দেশের উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com