এমএজি ওসমানীর ১০১তম জন্মবার্ষিকী

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। পহেলা সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন।
এমএজি ওসমানীর ১০১তম জন্মবার্ষিকী

জেনারেল ওসমানী ১৯১৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস সিলেটের বালাগঞ্জ থানায়। 

বাবা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী এবং মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে ওসমানী সবচেয়ে ছোট ছিলেন।

১৯৩৪ সালে তিনি সিলেট সরকারি জিলা স্কুল থেকে সফলতার সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সমগ্র ভারতবর্ষে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার প্রদান করে। পরবর্তীতে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৩৯ সালে দিল্লীতে ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেন। পরবর্তীতে দেরাদুনে ব্রিটিশ-ভারতীয় সামরিক একাডেমি থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৪০ সালের ৫ অক্টোবর কমিশন লাভ করেন।

১৯৪১ সালে ক্যাপ্টেন এবং তার পরের বছরেই মেজর পদে উন্নীত হয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটেলিয়ন নিযুক্ত হন। এই সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। 

১৯৪৬ সালে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আই সি এস হন। তবে তিনি সরকারি পদে যোগদান না করে সামরিক বাহিনীতেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি পাকিস্তান চলে আসেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রচণ্ড সাহস ও তুখোড় মেধা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য বাঙালিদের মতো তিনিও সেখানে পদে পদে বঞ্চিত হতে থাকেন। ১৯৬৭ সালে কর্নেল পদেই তাকে অবসর প্রদান করা হয়।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে ওসমানী বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি জেনারেল পদে উন্নীত হন। 

১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল পদ বিলুপ্ত করলে তিনি সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে মুজিব সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগদান করেন।

শুধু ছাত্রজীবনে নয়, জেনারেল ওসমানী কর্মজীবনেও অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। অনেক বাধা থাকা সত্ত্বেও তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে বাঙালি সৈনিকদের জন্য পদ সংরক্ষণ করে রাখতেন। 

এছাড়া তিনি পাকিস্তান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মার্চ সঙ্গীত রূপে কাজী নজরুল ইসলামের 'চল্ চল্ চল্ উর্ধ্বগগনে বাজে মাদল' গানটির সরকারি স্বীকৃতি আদায় করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একদিন গড়ে উঠেছিল 'বেঙ্গল রেজিমেন্ট'। সেইজন্যেই তাকে বলা হয় 'ফাদার অব দি বেঙ্গল রেজিমেন্ট'।

চিরকুমার, মেধাবী ও অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মানুষ আজীবন জেনারেল ওসমানীর বীরত্ব স্মরণ করে  যাবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com