কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন, ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছেন।
১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯২৯ সালে নয় বছর বয়সে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন।
চোখের জটিলতার কারণে ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ নিতে পারেননি। চোখে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। পুরোপুরি সেরে উঠতে বেশ সময় লাগে।
১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জের মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে আবার পড়াশোনায় ফেরেন। এরপর গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময়ই।
বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের সারথি শেখ মুজিব ছোটবেলা থেকেই স্পষ্টভাষী-প্রতিবাদী ছিলেন। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। বার বার পাকিস্তানের জেলে বন্দি হয়েও পিছু না হটে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন আন্দোলনে।
মাতৃভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ কোথায় নেই তার অবদান। জেলে বন্দি অবস্থায় ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ডাক দিয়ে অনশন পালন করেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিকে তিনি ‘বাংলার মানুষের বাচাঁর দাবি’ বলে উল্লেখ করেন।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার পর মাত্র নয় মাসে তার সরকার সংবিধান রচনা করে সোনার বাংলা গড়ার কাজে হাত দেয়।
বাংলার মানুষের প্রতি তার ভালবাসা ও অসীম সাহসে মুগ্ধ হয়ে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি।’
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাঙালির হৃদয় থেকে তাকে মুছে ফেলা এত সহজ নয়। শেখ মুজিবুর রহমান নামটির সাথে মিশে আছে এ জাতির আবেগ, ভালোবাসা, শক্তি, প্রেরণা আর সাহস।