দুখু মিয়ার ১২০ তম জন্মবার্ষিকী

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
দুখু মিয়ার ১২০ তম জন্মবার্ষিকী

১৮৯৯ সালের ২৫ মে বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যেষ্ঠ বাবা কাজী ফকির আহমেদ এবং মা জাহেদা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন তিনি। তিনি বাবা-মায়ের ষষ্ঠ সন্তান। তার বাবা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম।

কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল 'দুখু মিয়া'। তিনি স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। মসজিদের মক্তবে কুরআন-হাদিস নিয়ে পড়তেন।

মাত্র নয় বছর বয়সে নজরুল বাবাকে হারান। তাই পারিবারিক অভাব অনটনের দিনে তাকে কাজে নামতে হয়। যার ফলে তার পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হয়।

মক্তবে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এরপর যোগ দেন লেটোর দলে। লেটো ছিল বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান  ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার  ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল।

লেটো দলে থেকেই নজরুলের সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। লেটো দলের নাটকের জন্য নজরুল অনেক গান ও কবিতা লিখেন।

১৯১০ সালে নজরুল লেটো দলে ছেড়ে ভর্তি হন স্কুলে। তার প্রথম স্কুল ছিল রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল। এরপর ভর্তি হন মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে যা পরবর্তীতে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন নামে পরিচিতি লাভ করে।

আর্থিক সমস্যা ফের তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়।

তিনি প্রথমে যোগ দেন বাসুদেবের কবিদলে। এরপর খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং পরবর্তীতে আসানসোলের চা-রুটির দোকানে কাজ করেন। দোকানে বসে বসে নজরুল ছড়া কাটতেন। এটা দেখে আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ বেশ খুশি হন। নজরুল যে প্রকৃত প্রতিভাধর, সেটা তিনি প্রথম উপলব্ধি করেন।

দারোগা রফিজউল্লাহ নজরুলকে ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন।

১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নজরুল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দেন। তখন তিনি দশম শ্রেণিতে পড়তেন।

নজরুল সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন প্রায় আড়াই বছর। করাচি সেনানিবাসে নজরুল তার সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখেন।

সেনানিবাসে বসেই নজরুল তার প্রথম গদ্য বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী লিখেন। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা মুক্তিসহ বেশ কিছু গল্প রচনা করেন এসময় তিনি।

নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল ছিলেন সর্বদাই সোচ্চার।

ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে তার রচিত 'বিদ্রোহী' কবিতা প্রকাশিত হলে সাহিত্যিক হিসেবে জায়গা করে নেন। প্রতিবাদী মনোভাবই হলো তার লেখালেখির মূল বিষয়বস্তু।

১৯৪২ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে কবি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন।

১৯৭২ সালে কবিকে স্বাধীন বাংলাদেশে এনে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন।

প্রতিভাবান এই ব্যক্তিত্ব ১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতাল) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলাম তার রচিত গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গজল ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন আজীবন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com