শিশুদের জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ

একটি শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রথমেই চাই সুস্থ পরিবেশ। জন্মের পর শিশু যদি তার বেড়ে ওঠার জন্য অনুকূল পরিবেশ না পায় তাহলে স্বভাবতই তার জীবন সংশয় দেখা দেবে।
শিশুদের জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ

জলবায়ুর পরিবর্তনে বিশেষ করে প্রভাবিত হচ্ছে শিশুদের বিকাশ। এর উপর যুদ্ধ কবলিত দেশের পরিস্থিতি তো আরোও ভয়াবহ। জলবায়ুর এরূপ পরিবর্তনে শিশুদের বিকাশ ব্যহত হচ্ছে। তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন।

এ বিষয়টি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, আমাদের দেশের জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সবুজ বাংলার পানি, বাতাসের সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে কত ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও সীসার মতো ধাতু। ভেসে বেড়াচ্ছে নানা ধরণের রোগ-জীবাণু। যা হতে পারে যে কোনো নবজাতকের প্রাণহানীর কারণ।

এই জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অনেক শিশু অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নিচ্ছে। পুষ্টিহীনতা ও অটিজম এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ।

জাতিসংঘের ২০১৮ সালের এপ্রিলে করা এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ইয়েমেনে অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২১ লাখ। পাঁচ বছরের নিচের চার লাখ ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য তহবিলের হিসাবে, ২০১১ সালে সোমালিয়ায় না খেতে পেয়ে মারা গেছে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ; যাদের অর্ধেকই শিশু। কেবলমাত্র সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের কারণ খরা। বাকি দেশগুলোতে সংঘাত আর মানব সৃষ্ট কারণে ঘটছে এমন বিপর্যয়।

আমাদের দেশে জলবায়ুর ভয়াবহ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্প-কলকারখানার গড়ে ওঠা, সবুজ বনায়ন নিঃশেষ করে ইট ভাটা তৈরি ইত্যাদি।

ইউনিসেফের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইট ভাটা এবং আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।

ফলে দেখা দিচ্ছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ উজাড় করছে গ্রামকে গ্রাম। এদেশে সবচেয়ে বড় এবং দুর্বিষহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো বন্যা। এছাড়া দেশে নদী ভাঙনের ফলে গৃহ ও কর্মহীন হয়ে পড়ছে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষরা। এর ক্ষয়-ক্ষতি ও ভোগান্তি অবর্ণনীয়। এতে করে বাধ্য হয়েই কর্মহীন ও গৃহহীন মা-বাবারা তাদের শিশুদের কাজ করতে পাঠাচ্ছেন। এতে করে প্রথমত শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে খুব কম বয়সে শিশু শ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ায় শারীরিক বৃদ্ধিতেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

দরিদ্রতার করণে এতে তো ঐ সব বাবা-মা শিশুদরে ঠিকমতো খাবার এবং যত্ন নিতে পারছেন না।

জলবায়ুর এরূপ পরিবর্তন বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অধিক ঝুঁকি তৈরি করছে। সংসারের টানা পোড়নে দায়িত্ব নিতে না পেরে মেয়ে শিশুদের দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে মেয়ে শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বাংলাদেশে এক কোটি নব্বই লক্ষেরও বেশি শিশুর জীবন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সরাসরি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানাচ্ছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

সব চাইতে ঝুঁকিতে রয়েছে এক কোটি ২০ লক্ষ শিশু। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত অনেক পরিবার নিজের এলাকায় সর্বস্ব হারিয়ে কাজের খোঁজে শহরে চলে আসছে। সেই সব পরিবারের শিশুদের জন্য পাচার, এমনকি যৌন পেশায় বাধ্য হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।

খরা আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৩০ লক্ষের মতো। জীবনের তাগিদে তাদের অনেক দ্রুত বড় হয়ে উঠতে হচ্ছে এবং নিজের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, এমনটাই বলছে ইউনিসেফ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com