জামদানি এক প্রকার বস্ত্র যা কার্পাস তুলা থেকে প্রস্তুত করা হয়। জামদানি বুননকালে তৃতীয় একটি সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। ঢাকাকেই জামদানির আদি জন্মস্থান বলে গণ্য করা হয়।
২০১৩ সালে জামদানির বুননশিল্পকে ইউনেস্কো ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেইজ অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অনেকের ধারণা জামদানি একটি ফারসি শব্দ। নকশা অনুযায়ী এর বিভিন্ন রকম নাম হয়ে থাকে। যেমন- তেরছা, জলপাড়, ঝালর, ময়ূরপাখা, জবাফুল, চন্দ্রপাড়, বাঘনলি, প্রজাপতিসহ নানা নামের বাহার নিয়ে রয়েছে জামদানি। শাড়ির পাড়ের নকশার নামে এর নামকরণ করা হয়। সাধারণত দুই ধরণের জামদানি শাড়ি রয়েছে। একটি হলো ফুল কটন। আরেকটি হলো হাফ সিল্ক। হাফ সিল্ক জামদানিতে সুতো থাকে রেশম আর তুলার। ফুল কটন জামদানি সম্পূর্ণ তুলার সুতো দিয়ে বুনন করা হয়।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এককালে জামদানি ছিল বিখ্যাত পরিধেয় বস্ত্র। উঁচু স্তরের মানুষের প্রিয় পোশাক ছিল এটি। ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেন মসলিন এবং মসলিন এর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হতো।
মোঘল সম্রাটদের আমলেও বেশ কদরের কাপড় ছিল জামদানি। কিশোরগঞ্জ এর বাজিতপুর ও জঙ্গলবাড়িতে আগে অনেক জামদানির কারিগর ছিলেন। বর্তমানে শীতলক্ষ্যা তীরের রুপগঞ্জ আর নোয়াপাড়া জামদানির মূল কেন্দ্র। এ নদীর তীরের আবহাওয়া জামদানি শাড়ির জন্য একদম উপযুক্ত। জামদানির কারিগরদের বিশেষ দক্ষতা থাকে। শত শত বছর ধরে চলে আসা জামদানি এখনো অনেকের কাছেই প্রিয়। প্রতি শুক্রবার শীতলক্ষ্যার তীরে ভোরে বসে জামদানির হাট। থাকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই সব জামদানি বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
আসছে ঈদ। ঈদ উপলক্ষ্যে নতুন শাড়ি কিনবেন যারা, জামদানিকে পছন্দের তালিকায় রাখা যেতেই পারে। এ ঐতিহ্যের সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার জন্য এটি যেন বড় সুযোগ।