শুনতে কি পান শ্রমশিশুর কান্না

শিশুদের যে সময়টা স্কুলে গিয়ে পড়ার কথা সে সময়টাতে আমাদের দেশের অনেক শিশুই পেটের দায়ে বিভিন্ন ধরণের ঝূঁকিপূর্ণ কাজ করছে।
শুনতে কি পান শ্রমশিশুর কান্না

এদের অধিকাংশকেই জোর করে শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। আবার টাকার লোভ দেখিয়ে অনেক অপরাধমূলক কাজও করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। খবরে অনেক সময় কিশোর অপরাধীর কথা শোনা যায়। আমি নিশ্চিত তারা ইচ্ছা করে এসব কাজের সঙ্গে জড়ায় না। তাদের কান্না দেখার নেই, কেউই। তাদের দুঃখ দুর্দশার শেষ কোথায়?

শিশুর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে দারিদ্র একটি বড় ভূমিকা রাখে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যন্য অভিজাত শহরের ট্রাফিক সিগন্যাল কিংবা রাস্তার পাশে একটু দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, শিশুরা ফুল বিক্রি করছে, কেউ বই, কেউ শসা, বরই কেউই বা শুধুই ভিক্ষা করছে। অথচ আইন প্রণেতারা সে সিগন্যাল পার হোন ঝা চকচকে গাড়ি করে।

অনেকে কাজ করে কারখানা, দোকানে, রেস্টুরেন্টে। এখানে তারা মালিকদের হাতে নির্যাতিত হয়।

গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে শিশুদের নির্যাতনের খবর আমরা পাই। পত্রিকার পাতা উল্টালেই শিশু-কিশোরদের ভয়ানক পরিণতির খবরের দেখা মিলবে।

কাজের সময় কোনো ঊনিশ-বিশ হলে তাদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করা হয়। এসব থেকে কি পরিত্রাণ পাবে শিশুরা?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা, ইউনিসেফের শহরাঞ্চলে শিশুদের অবস্থা নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে, ১৭.৬ শতাংশ শিশু মারাত্মক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়।

অন্যদিকে মেয়ে শিশুদের পরিস্থিতি আরোও করুণ। পরিবারের অভাব মেটাতে মেয়েরাই যেন মূল হাতিয়ার। প্রথমত দারিদ্রের কারণে জন্মের পরই সে শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার তারা হারিয়ে ফেলে আর কৈশোরে পা দিতে না দিতেই তাদরকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হয়। ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে।

আর যেসব মেয়েরা বিবাহ থেকে বাদ পরে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে। সেখানে গিয়েও তাদের দুঃখের শেষ নেই। বাসা-বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে কাজের একটু কমতি হলেই চলে নির্যাতন। যৌন নির্যাতনের খবর তো অহরহই পড়ি।

এসব শিশুদের কেউই পাচ্ছে না প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ।

সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিশেষে আমাদের সবার দায়িত্ব শিশুদের অধিকার রক্ষা করা। এছাড়াও সরকারকে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকৌশলে শিশু শ্রমকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

একজন শিশু হয়ে অপর শিশুর এমন পরিণতি কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সব শিশুর মৌলিক অধিকারগুলো সমানভাবে বাস্তবায়িত হোক এ আমার প্রত্যাশা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com