স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয়টি যদি আপনি খেয়াল করেন তবে দেখবেন পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও এগিয়ে এসেছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য। রাজপথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবুও স্বাধীন দেশে একটি মেয়ে স্বাধীনভাবে কেন চলতে পারে না? তাকে কেন ভয়ে কুঁকড়ে থাকতে হয়?
আমরা মেয়ে শিশুরা কতটুকু নিরাপদ, এ কথাটা একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে গেছে। ঘর, স্কুল, রাস্তা কোথায় নিরাপদ আমরা? আমাদের আশেপাশের পরিবেশ অনিরাপত্তায় ঢেকে আছে।
মানুষের ভিড়ে ফাঁদ পেতে আছে হয়তো কোনো এক বিকৃত মানসিকতার ঘাতক। যারা সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে নারী ও শিশুদের উপর।
আমাদের সমাজেরও দোষ আছে। মেয়েদেরকে শৈশবে শেখানো হয় না, কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে নিজের আত্মরক্ষা করতে হয়। আমরা সেই পাঠ শিখে বড় হতে পারিনি। আবার ঠিক কোনো ছেলে শিশুদের শেখানো হয় না কিভাবে একটি মেয়ে শিশুকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভলোবাসার চোখে দেখতে হয়।
নারীরাও যে সমান মর্যাদার অধিকারী তাও শেখানো প্রয়োজন ছেলে শিশুদের। খবরের কাগজে হামেশাই আমরা মেয়েদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতনের খবর দেখি। এরকম আরও অনেক খবর আছে যেগুলো খবর পর্যন্ত পৌঁছে না। এসব ঘটনায় দায়ী করা হয় মেয়েদের পোষাককে। তাহলে দুই/তিন বছরের শিশু কেন শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে? সে কি পর্দা করবে?
যৌন হয়রানি ও সহিংসতা একটি শিশুর মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি করে। সেই ছোট বয়সে একটি শিশুর কোমল মনকে প্রভাবিত করে।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, “সমাজের দুটি চাকা যদি সমান্তরাল না থাকে এবং সমানভাবে সচল রেখে ভূমিকা না রাখে তাহলে সে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে পারলেও আগাতে পারে না।”
আজকের দিনে আমরা এই একটি জায়গাতেই লড়াই করে যাচ্ছি এখনও। সমস্যা পুরুষের মগজে। মগজ তাকে যেভাবে পরিচালিত করে সে সেভাবেই চলতে পছন্দ করে। তবে সব পুরুষকে এক পাল্লায় পরিমাপ করা হলে তাও ভুল হবে। নারীর লড়াই পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, নিপীড়কের বিরুদ্ধে। লড়ে যেতে হবে আমাদের।