থাকেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ বাজারের পেছনে জেলেপাড়ায়। একাকী জীবন। ছোটবেলায় সোনামনির বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় সুন্দরবনে মাছ শিকারে গেলে স্বামীকে প্রাণ দিতে হয় বাঘের আক্রমণে। একমাস বয়সী শিশুসহ স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় শাশুড়ি। সমাজ সোনামনিকে ‘অপয়া' বলে আখ্যা দেয়। যেন তার অপরাধের কারণে স্বামীকে বাঘে নিয়েছে। এভাবে দিন যেতে থাকে। কিছুদিন পরে দেবরের সঙ্গে বিয়ে হয় সোনামনির।
মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্বামী ও সুন্দরবনে মাছ শিকরে গেলে তাকে ও বাঘের আক্রমণে প্রাণ দিতে হয়। দুই স্বামী বাঘের পেটে যাওয়ার পর সোনামনি ‘স্বামীখেকো’ বলে পরিচিতি পায়।
সমাজ তাকে দেখে ভিন্ন চোখে। কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করত না। সমাজে চলাফেরাই তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। সমাজ তাকে অপয়া, অলক্ষ্মী বলে আখ্যা দেয়। শাশুড়ি তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখেন, যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে সোনামনির মুখ দেখতে না হয়।
সোনামনির প্রথম স্বামীর একটি সন্তান ও দ্বিতীয় স্বামীর তিনটি সন্তান। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে মেয়েরা সবাই বিবাহিত এবং আলাদা আলাদা। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই মাকে ও তারা দেখে না। বর্তমানে সংসার কিভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার আর সংসার! আমি একলা! গাঙে জাল টানি মাছ, কাঁকড়া ধরি, ঘেরে মাটি কাটার কাজ করি। যখন যে কাজ পাই তা করি। এভাবে চলতিছে।”
তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমি বিধবা তা তোমরা জানো কিন্তু আমাগে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা তা জানে না।”
বেসরকারি সংস্থা লিডার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাঘের আক্রমণে মারা গেছে পাঁচ শতাধিক বনজীবী। ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাঘের আক্রমণে কারো নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ২০১৭ সালে তিনজন নিহত ও একজন আহত হওয়ার খবর জানা গেছে।
একজন সোনামনির গল্প থেকেই বাঘ বিধবা নারীর জীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একের পর এক ঘটনা বলছিলেন তিনি। কত সাংবাদিক যে তার গল্প শুনতে গেছেন, তার হিসেব নেই। তবে ভাগ্য ফেরেনি বলে আক্ষেপ করেন তিনি।