দানবীর রণদা প্রসাদ

আমি মানবিক শাখার ছাত্র। ইতিহাস আমাকে ঘাটতেই হয়। ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা মহীয়সীদের জীবন গাঁথা পড়তে আমার ভালো লাগে। তাদের কাছে আমাদের শেখার আছে, জানার আছে। উনাদের প্রেরণা নিয়েই আগামীর দিনগুলো রঙিন করার স্বপ্ন দেখি।
দানবীর রণদা প্রসাদ

আমার ছোট জীবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী,মাস্টার দ্য সূর্য সেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্রবসু, তিতুমীর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ আরো অনেকের জীবনী পড়ে শিখেছি অনেক। তাদের একেক জনের জীবনী একেক রকম তবে মানব কল্যাণ সাধন ছিল সবার প্রধান লক্ষ্য।

আমাদের মির্জাপুরেও বিখ্যাত দেশ বরণ্য এক মহান ব্যক্তির জন্ম হয়। আঁধারের আলো হয়ে জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তি বাঙালির হৃদয়ে তার কর্মের মাধ্যমে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন আজীবন। ব্যবসা বাণিজ্য তার পেশা হলেও সমাজের সেবা করা ছিল তার একমাত্র নেশা। বলছি বাংলাদেশের সুনামধন্য দানবীর,শিক্ষা অনুরাগী রণদা প্রসাদ সাহার কথা।

যিনি আরপি সাহা নামেই পরিচিত ছিলেন। এই সমাজ সেবকের জীবনের শুরুর দিকের পথ চলা এত সহজ ছিল না।

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা রণদা সাত বছর বয়সে মা কুমুদিনী দেবীকে হারান। জানা যায় সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে কুমুদিনী দেবী মৃত্যুবরণ করেন। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন রণদা প্রসাদের বাবা দেবেন্দ্রনাথ সাহা। দ্বিতীয় মায়ের আশ্রয়ে বহু দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে ও অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে রণদার শৈশব কাটে।

শত কষ্টের মাঝে রণদা শৈশব অতিবাহিত করলেও জীবনের সঠিক পথ থেকে এক পা পিছু হাঁটেননি। স্বপ্ন দেখেছেন নতুন এক জীবনের।

শুধু নিজের জীবন আলোকিত করা নয়, তিনি যে হাজারো জীবনের আলোর দিশারী হবেন সেটা হয়তো নিজেও কোনোদিন ভাবতে পারেননি।

দ্বিতীয় মায়ের নির্যাতন আর অত্যাচার সইতে না পেরে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান তিনি। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জীবিকার তাগিদে মুটের কাজসহ বিভিন্ন কাজ করেন। এসময় রাজনীতিতে সক্রিয় হন, যোগ দেন স্বদেশী আন্দোলনে। এজন্য বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছেন তিনি।

জীবনে শত বাধা থাকা সত্ত্বেও আগামীর রঙিন সূর্য তাকে হাত ছানি দিয়ে ডেকেছে। এইজন্যই তিনি নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে নেমে পড়েন ব্যবসায়। সততা তাকে সাফল্য এনে দেয়।

কয়লা, চামড়া, পাটের ব্যবসায় সফল হয়ে দেশের প্রথম সারির ধনাঢ্য ব্যক্তিদের তালিকায় ওঠে আসেন রণদা। ধনকুবের হয়েও গরীবকে শোষণ করেননি বরং বুকে টেনে নিয়েছেন।

দেশ ও সমাজের সেবায় বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের হাজার কোটি টাকার সম্পদ। নারী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৪২ সালে তার প্রপিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামে 'ভারতেশ্বরী বিদ্যাপীঠ' স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে এটি ভারতেশ্বরী হোমস এ রূপ লাভ করে।

এছাড়া টাঙ্গাইলে শহরে ১৯৪৩ সালে কুমুদিনী মহিলা কলেজ এবং মির্জাপুরে মির্জাপুর ডিগ্রি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মির্জাপুর এসকে পাইলট হাইস্কুল নির্মাণ করেন৷

মানিকগঞ্জে বাবার নামে দেবেন্দ্র কলেজ স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে রণদার সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত লাভের অংশ গরীবদের উদ্দেশ্যে ব্যয় করার জন্য কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল নামে অলাভজনক প্রাইভেট কোম্পানি রেজিস্টার্ড করেন। এটা ছিল তার অনন্য এক কৃর্তি।

মানুষের ভালোবাসায় কয়জন ব্যক্তিই পারেন এরকম নিজের কষ্টে অর্জিত সম্পদ সামাজিক কল্যাণে বিলিয়ে দিতে? মহান এই ব্যক্তির জীবনী থেকে আমাদের সবার শেখার আছে। বিশেষ করে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম যারা অল্পতেই ভেঙে পড়ি, জীবনটাকে যতটা সহজ মনে করি আসলে জীবন ততটা সহজ নয়। আর জীবনে ব্যর্থতা আসলেই হতাশায় ভেঙে পড়ে জীবনটাই শেষ করে দেওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না৷

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com