১৬ বছর ধরে তিনি বসবাস করছেন কল্যাণপুর বস্তির ছোট্ট এক ঘরে। তার স্বামী অন্ধ আর ছেলে বিয়ে করার পর থেকে মায়ের খোঁজ খবর নেন না বড় ছেলে। দুই মেয়ে নিয়ে একাই চালিয়ে যাচ্ছেন সংসার, গড়ে তুলছেন মেয়েদের ভবিষ্যৎ।
তিনি বলছিলেন, “১৩ বছর আগে মাটি কাইটা আমি পুঁজি জমাইছি। মানুষের বাসা বাড়িতেও কাম করছি।
“সেই কষ্টের টাকা চুরি হয়া গেছে। কিন্তু আমি জমানো বন্ধ করি নাই। এখন বাসায় বাসায় যাইয়া কাপড় বেঁচি।”
তার বড় মেয়ে দশম ও ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু লেখাপড়ার জন্য টাকা জোগাড় করাই এই মায়ের জন্য চ্যালেঞ্জ।
অনেক সময় সংসারের চাল ডাল কেনার টাকাও থাকে না। দারিদ্রের কষ্ট তার ছোট্ট সংসারকে নিত্যই দাহ করে।
বিয়ের কয়েকবছর পরেই তার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে। বড় মেয়ে জন্ম হওয়ার ২১ দিনের মাথায় তার স্বামী তাকে রেখে চলে যান।
শিরীন বেগমকে ঝামেলা মনে করে তার থেকে মুক্ত হবার জন্য তার স্বামী তাকে হত্যাচেষ্টাও করে। এসব বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল শিরীন বেগমের। তিনি কান্না চেপে অনেকটা হাসিমুখে বলেন, “আমার কারো প্রতি কোন অভিযোগ নাই।
“যে আমার সাথে খারাপ করছে, সে জবাব দিবে। আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করুম না।”
স্বামী দ্বারা নির্যাতিত হবার পরে শিরীন বেগম নিজেকে শক্ত করেন আর সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন। মাটি কেটে, বাসায় কাজ করে পুঁজি জমিয়ে তিনি পাইকারি দরে কাপড় কেনা শুরু করেন। সেসব জামা-কাপড় বাসায় বাসায় ঘুরে বিক্রি করেন। আর তাই দিয়ে চলে তার সংসার।
পাঁচ বছর আগে তার স্বামী অন্ধ হবার ফলে আয় উপার্জনে অসমর্থ হয়ে যান তাই তার কাছে ফিরে আসেন।
শিরীন বেগম তার মেয়েদের খরচ চালানোর পাশাপাশি স্বামীরও ভরণপোষণ করেন। শিরীন বেগমের স্বপ্ন তার মেয়েরা বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। প্রতিষ্ঠিত ও সাবলম্বী হয়ে তাদের মায়ের দুঃখ ঘোচাবে।
আমাদের আশেপাশেই আনাচে কানাচে লুকিয়ে এমন অনেক সত্যিকারের নায়ক। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা, কমিউনিটিতে নারীর ক্ষমতায়ান এই সংগ্রামী নারীদের জীবনযুদ্ধ কিছুটা হলেও সহজ ও সুন্দর করে দিতে পারে। বিদায় নেবার আগে শেষবার জিজ্ঞেস করলাম, যে আপনাকে মেরে ফেলতে চাইলো তাকে আজ আপনিই আশ্রয় দিচ্ছেন! তিনি হেসে বললেন, “আমরা তো মায়ের জাত, কাওরে ফালাইয়া দিতে পারিনা। সে আমার লগে যা করার করসে, আমি করুম না।”