বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি আবার

টেলিভিশনে যখন সাত মার্চের ভাষণ শুনি শরীরের রক্ত টগবগ করে ওঠে। বুকের ভেতর বিদ্রোহ জাগে, তখন গলা ফাটিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো বাংলা মানুষের অধিকার নিয়ে ভাষণ দিতে ইচ্ছে করে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি আবার

ছোটবেলা থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনেই আমি তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি  বা তাকে নিয়ে লেখা ছাপা হলেই চোখের পলকে  পড়া শেষ হয় আমার।

একদিন বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি এক বড় ভাইয়ের বাড়িতে দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। তাকে বলে বইটি নিয়ে আসলাম।

তখন স্কুলে ঈদের বন্ধ চলছিল তাই হাতে অনেক সময়। সারাদিন শুধু ঐ বইটা পড়তাম। পুরো বইটা শেষ করতে ২০ দিন সময় লেগেছিল আমার।

বইটি আমাকে নতুন এক বঙ্গবন্ধুকে চিনিয়ে দিয়েছে, আমার ভেতর তৈরি করেছে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ত্যাগ করার মানসিকতা ও ভালোবাসা। তার সারাজীবন জুড়ে শুধু এই দেশের জন্য ত্যাগ আর ত্যাগ। এত লিখেও শেষ হয় না।

যিনি আজীবন ভেবেছেন বাংলা ও বাংলার মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা, ছোটবেলা থেকেই উদার মনের মানুষ ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলন সংগ্রাম, মিটিং মিছিল, সভা সমাবেশ ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। দেশের জন্য জেল খেটেছেন। তবু তার মনোবল বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী বরং তিনি জেলে থাকা অবস্থায় জেলে যাওয়া নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনী পড়ে জানতে পারি ১৯৫২ সালে যখন তৎকালীন স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকার বিনা বিচারে তাকে জেলে বন্দী করে রাখে তখন তিনি ও তার  সহকর্মী  মহিউদ্দিন ফরিদপুর জেলে নিজেদের মুক্তির দাবিতে অনশন করেন, তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিভিল সার্জন তাদের নাকে পাইপ লাগিয়ে জোর করে খাবার দিতেন। ফলে মুজিবুর রহমানের নাকে ঘা হয়ে যায়। ঐসময় ঢাকাতে মিছিল
ফরিদপুরেও মিছিল, হরতাল হয় বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে।

তার আত্মজীবনী বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের আরও খুঁটিনাটি জানার উৎসাহ দেয়। আমি জেল জীবনকে জানবার জন্য ইন্টারনেট থেকে ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটির অ্যাপ নামিয়ে নেই।

বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেবার পর ১৯৬৯ পর্যন্ত কারাগারে থাকেন। সেই সময়ের কারাজীবন নিয়ে লিখেছিলেন
এক ডায়েরি, যার নাম ছিল থালা বাটি কম্বল, জেল খানার সম্বল। এই ডায়েরিই বই আকারে ২০১৭ সালে প্রকাশ করা হয়, কারাগারের রোজনামচা নামে।

জেল জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এখানে লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি। শুধু রাজবন্দী হিসাবে শুধু নয় সাধারণ কয়েদী হয়েও জেলা খাটেন তিনি। বই, পত্রিকা পড়ে সময় কাটাতেন এবং দেশের খোঁজ খবর নিতেন জেলে বসেই। তিনি নিজেকে নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখতেন না, তার স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়বার। কিন্তু এই সোনার বাংলার কারিগরকেই যে স্বাধীন দেশে নৃংশসভাবে সপরিবারে খুন হতে হবে তা কেউ কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। তার জীবন সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তাতে শুধু বারবার এই কথায় মনে হয় আরেকবার যদি মুজিব ফিরে আসতেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com