ঐতিহ্যের নিদর্শন মহেড়া জমিদার বাড়ি (ভিডিওসহ)

উত্তরের দরজা নামে খ্যাত টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নে সভ্যতা আর ঐতিহ্যের এক অমূল্য নিদর্শন মহেড়া জমিদার বাড়ি।
ঐতিহ্যের নিদর্শন মহেড়া জমিদার বাড়ি (ভিডিওসহ)

টাঙ্গাইল সদর  থেকে প্রায় ১৮ মাইল পূর্বে এবং মির্জাপুর সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে আট একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই জমিদার বাড়ি।

মূলত জমিদার বাড়ি হলেও ১৯৭২ সালে পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল করা হলে দিন দিন জমিদার বাড়িটির সৌন্দর্য বর্ধনে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ।

জানা যায়, ১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে মহেড়া গ্রামে এটি নির্মাণ করা হয়।

বৃটিশ সরকার জমিদার প্রথা চালু করলে কালিচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার পুত্ররা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের কাছ থেকে একটি অংশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিনে নেন আর তখন থেকে শুরু হয় জমিদারি শাসন ও শোষণ। তৎকালীন জমিদারগণ হলেন, বুদাই সাহা, বুদ্ধু সাহা, হরেন্দ্র সাহা এবং কালীচরণ সাহা। আর তাদের হাত ধরে গড়ে ওঠে এই জমিদার বাড়িটি।

বাড়ির মূল ফটক দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে চোখ পড়বে চারটি লজ। আরও আছে কাচারি, নায়েব সাহেবের ঘর, গোমস্তাদের ঘর। জমিদার বাড়ির সামনেই আছে বিশাল এক দীঘি যার নাম বিশাখা সাগর।

লজগুলোর পেছনে আছে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে দুইটা পুকুর। এছাড়া পুলিশ মিউজিয়াম, মিনি চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক এবং পিকনিক স্পটও আছে। 

জমিদার বাড়ির চারটি লজ। এরমধ্যে অন্যতম চৌধুরী লজ। প্রথমেই দেখা মিলবে এই ভবনের। এর ছাদের দেওয়ালটি অপূর্ব কারুকার্যে সজ্জিত। লজটি রোমান ধাঁচে নির্মাণ করা হয়। সামনে রয়েছে বিশাল সবুজ মাঠ যেখানে নানা দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। 

সাদা ও নীলের সমন্বয়ে স্থাপনা মহারাজ লজ। এতে ১২টি কক্ষ আছে। আছে ঝুলন্ত বারান্দা, যা শ্যুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

আনন্দ লজ নামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবনের সামনে রয়েছে বিশাল বাগান আর সিংহদ্বার। বাগানে বাঘ, হরিণ আর বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি রয়েছে।

আরো আছে কালীচরণ লজ ও রানী মহল। দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ির মাঝেও লুকিয়ে আছে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি। 

১৯৭১ সালের ১৪মে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে স্থানীয় রাজাকার আল-বদরদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ির কূলবধূ যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তাদের মধ্যে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পণ্ডিত বিমল কুমার সরকার, মণীন্দ্র কুমার চক্রবর্তী, অতুল চন্দ্র সাহা এবং নোয়াই বণিককেও হত্যা করা হয়।

এরপর জমিদার বাড়ির অন্য সদস্যরা শত বছরে বাড়ি আর কোটি টাকার সম্পদ ফেলে চরম ঘৃণা আর ক্ষোভ নিয়ে লৌহজং নদী দিয়ে নৌকা যোগে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। 

তারপর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বায়েজীদের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিবাহিনী জমিদার বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে। বর্তমানে জমিদার বাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।

 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com