সংগ্রামী নারী সুফিয়া কামাল

”১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্ম নেন সুফিয়া।”
সংগ্রামী নারী সুফিয়া কামাল

বিশ শতকের প্রথম দিকের ঘটনা, নারীশিক্ষার এমনকি বাড়ির বাহিরে যাওয়ারও অধিকার ছিল না। তারা ছিল গৃহবন্দি বা নজর বন্দি। বেগম রোকেয়ার হাত ধরে সে অবস্থার খানিক বদল ঘটলেও নারীরা অবহেলিতই রয়ে গেছে আজও।

সে সময় ধর্ম-সমাজ-সংসারে নারী ছিল অন্দরমহলের, অন্ধকারের জীব। ধর্মগ্রন্থ ছাড়া অন্য বই পড়া ছিল নিষিদ্ধ। সে সময়, ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্ম নেন সুফিয়া। ক্রমশ তিনি হয়ে ওঠেন একজন প্রথিতযশা কবি, লেখিকা এবং নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।

সুফিয়ার বাবা সৈয়দ আবদুল বারী পেশায় ছিলেন উকিল। সুফিয়ার জন্মের সাত বছরের মাথায় তিনি গৃহত্যাগ করেন। সুফিয়াকে বাড়িতে ডাকা হতো হাসনা বানু।

বাবার গৃহত্যাগের পর নানার বাড়িতে শৈশব কেটেছে। স্কুল-কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ পাননি। তাছাড়া তখন তাদের পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ এক রকম নিষিদ্ধই ছিল। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও সুফিয়ার বাংলা ভাষার প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ ও মমত্ব ছিল।

তার বাংলা শিক্ষার হাতেখড়ি হয় মা সৈয়দা সাবেরা খাতুনের কাছে। মামার বিরাট লাইব্রেরির বই, ভাইয়ের হোস্টেলের পণ্ডিত বাদশা মিয়ার সহযোগিতায় সুফিয়া কামাল শিক্ষিত হয়ে উঠেছেন।

১৯২৪ সালে ১৩ বছর বয়সে মামাত ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে হয়। সৈয়দ নেহাল হোসেন সুফিয়াকে উৎসাহিত করেন সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায়। এছাড়াও সাহিত্য সাময়িকীর সাথে যোগাযোগও ঘটিয়ে দেন।   

১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ সে সময়ের সাময়িকী সওগাতে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বেগম রোকেয়াসহ অনেক গুণীজনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হন।

বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা ও প্রতিজ্ঞা তার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়, যা তার জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। নারীদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তার সাহিত্যচর্চাও বেগবান হয়ে ওঠে। ১৯৩৭ সালে তার গল্পের সংকলন ‘কেয়ার কাঁটা’ প্রকাশিত হয়।

১৯৩২ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে আর্থিক সমস্যায় পড়লে সুফিয়া কামাল কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি। এর মাঝে ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

এরপর ১৯৩৮ সালে যখন কাজী নজরুল ইসলাম সুফিয়ার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’র মুখবন্ধ লিখে দেন এবং বইটি রবীন্দ্রনাথের প্রসংসায় প্রসংসিত হয় তখন লেখক হিসেবে সুফিয়া কামালের নাম ছড়িয়ে পড়ে।

ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে ছোট শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবি জানান।

এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ও পাকিস্তান বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তিনি।

স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও এই নারীর ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল এছাড়া মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন।

সাহিত্যচর্চা ও কাজের অংশ হিসেবে সুফিয়া কামাল পেয়েছেন ৫০টিরও বেশি পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে মুক্তধারা পুরস্কার বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সংগ্রামী নারী পুরস্কার, দেশবন্ধু সিআরদাস গোল্ড মেডেল, সোভিয়েত লেনিন পদক।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com