ভিডিও গেইমে আসক্তি

অন্যসব বিষয়ের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে আমার আগ্রহ বেশি। অষ্টম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ বইটি ঘুরেফিরেই পড়ি। পড়ি আরও দেশ বিদেশের নানা রকম আবিষ্কারের গল্প। সেখান থেকেই জানলাম ভিডিও গেইমের অনেক তথ্য।
ভিডিও গেইমে আসক্তি

প্রথমেই দুটি উন্নত দেশে শিশুদের ওপর ভিডিও গেইমের প্রভাব কেমন তার উদাহরণ দিয়ে শুরু করছি। প্রথমেই বলি জাপানের কথা। জাপানে ভিডিও গেইমের প্রভাব শিশুদের উপর এতোটাই বেশি যে সে দেশের আইসিটি বিভাগে একটি সিস্টেম চালু হয়েছে।

প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি ভিডিও গেইম খেললে তাকে সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়। তারপরও যদি খেলতে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বিশ্বের সবথেকে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনেও ভিডিও গেইমের প্রকোপ অনেক বেশি। তাই তো চীনের 'টেনসেন্ট' নামের একটি ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান ভিডিও গেম খেলার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।

ভিডিও গেইম শিশুদের দুটো স্টেপে নিয়ে যায়।প্রথমে আগ্রহ সৃষ্টি, পরে সেই আগ্রহকে আসক্তিতে পরিণত করা।  

‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা’ ভিডিও গেইমের আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার তালিকাভূক্ত করেছে।এখানে এটিকে আচরণগত সমস্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আসক্তির লক্ষ্মণগুলি হচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিত সময় ধরে গেইম খেলা, গেইমিংকে সব কাজের ওপরে গুরুত্ব দেওয়া।এবং এর খারাপ প্রভাব সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও এর প্রতি আসক্তি তীব্র হতে থাকা।

লন্ডনের নাইটিংগেল হাসপাতালের প্রযুক্তিনেশা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডক্টর রিচারড জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই সিদ্ধান্ত সময়ের চাওয়া ছিলো।এতে এই গেইমিং আসক্তি নিয়ে গবেষণার প্রসার ঘটবে, মানুষ গুরুত্বের সাথে দেখবে।  

একজন যখন এই ধরনের গেইমে আসক্ত হয়ে পড়ে তখন সারাক্ষণ গেইম নিয়ে ভাবতে থাকে, কীভাবে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জন করবে, কীভাবে তার প্রতিযোগীকে হারাবে এসব গেইমের প্রতিটি ঘটনা তার মাথায় ঘুরতে থাকে। সে যখন গেইম খেলা বন্ধ করে অফলাইনে চলে আসে তখনও ভাবতে থাকে তার কোনো প্রতিযোগী মনে হয় তাকে ছাড়িয়ে গেল।

সে নিজে যখন গেইমটি খেলতে বসে তখন তার মাঝে এক ধরনের অস্বাভাবিক উত্তেজনা কাজ করে। এর ফলে পড়ালেখাসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়াও সে অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়।গেইমিং-এ আসক্তির কারণে বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে- কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম (কব্জির প্রদাহজনিত রোগ), মাইগ্রেনেরব্যথা, নিদ্রাহীনতা, পিঠের ব্যথা, দুর্বল স্বাস্থ্য ইত্যাদি। 

এই ডিজিটাল গেইমের ফলে নিজ সন্তান বিক্রি থেকে শুরু করে আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটে।

ভিডিও গেইম মানুষের কিছু কাজের সময় দখল করেছে যেমন - বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, বই পড়া, পাঠ সহায়ক কাজ, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ইত্যাদি।  

শিশুদের জন্য ভিডিও গেইম এ আসক্তি অত্যন্ত ভয়াবহ একটি ব্যাধি। এই সময়টুকু বাইরে খেলাধুলা করলেও শারীরিক ব্যায়াম হয়, যেটা খুবই দরকারি।  

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com