পৃথিবীর পথে

ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি মিলে লম্বা অবসর। পড়ে ফেললাম, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের 'যে গল্পের শেষ নেই', দেবী প্রসাদ ও রমাকৃষ্ণ মৈত্রের 'পৃথিবীর ইতিহাস' আর সেই সঙ্গে স্কুলের পাঠ্য বিজ্ঞান বই। জেনে নিলাম পৃথিবী ও মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস।
পৃথিবীর পথে

মহাবিশ্ব থেকে গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সি থেকে নক্ষত্র, নক্ষত্র থেকে গ্রহ এবং সেই গ্রহ থেকেই অন্য সবকিছু। তাই প্রথমেই মহাবিশ্বের নাগরিক।  

মহাবিশ্ব কীভাবে উৎপত্তি লাভ করল এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ও পাকাপোক্ত প্রমাণ না থাকলেও বহু তত্ত্ব রয়েছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব।

এ তত্ত্ব মতে প্রায় চৌদ্দ বিলিয়ন বছর আগে অতি ঘন ও উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু একটি বিন্দু অবস্থায় ছিল।বিস্ফোরণের থেকেই সবকিছুর সৃষ্টি। এর প্রমাণস্বরূপ বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সবকিছু যে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সেটি ব্যাখ্যা করেছেন।    

এরপরেই আসে গ্যালাক্সি। আমরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে বসাবাস করি। প্রতিটি গ্যালক্সিতে গড়ে দশ সহস্র কোটি নক্ষত্র রয়েছে বলে অনুমান করে হয়।মিল্কিওয়েতেও সেরকম অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে।

এরপরে আসে সূর্য। সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে আটটি গ্রহ। সূর্য মূলত অন্যান্য নক্ষত্রের মতই জ্বলন্ত একটি গ্যাসপিণ্ড। এতে রয়েছে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাস। হাইড্রোজেন গ্যাসের পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বিকিরণ করে হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয় যার কারণেই এতে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় এবং ছড়িয়ে যায়। সূর্য এবং একে কেন্দ্র করে ঘুরছে এমন সব গ্রহ এবং জ্যোতিষ্ক নিয়ে সৌরজগৎ তৈরি। সৌরজগৎ মহাবিশ্বে গতিশীল অবস্থায় আছে।   

সূর্যের একটি গ্রহ হলো পৃথিবী। মানুষের জানামতে মানুষ বাসযোগ্য এবং প্রাণের অস্তিত্বসম্পূর্ণ একমাত্র গ্রহ এটি। সূর্যের সাথে একটি গ্রহাণুর সংঘর্ষের ফলে এর কিছু অংশ আলাদা হয়ে যায়। প্রথমে পৃথিবী উত্তপ্ত অবস্থায় থাকলেও দীর্ঘ সময় ঘূর্ণনের ফলে এটি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হচ্ছে। এখনও পৃথিবীর ভূগর্ভ উত্তপ্ত  রয়েছে।  

পৃথিবীর বয়স প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর। পৃথিবীর মাটিতে ইউরেনিয়াম নামক এক প্রকার বস্তু রয়েছে। প্রতিনিয়ত এটি আবার সিসাতে পরিণত হয়। প্রতি কেজি ইউরেনিয়ামের প্রতি বছর ৭৪ কোটি কেজির এক ভাগ সিসাতে পরিণত হয়। এভাবে ইউরেনিয়ামের ভেতরের সিসার ওজন থেকেই হিসেব করা হয় পৃথিবীর বয়স।   

পৃথিবী ঠাণ্ডা হতে হতে একসময় এতে পানির আর মাটির দেখা মিলল। এবং একশ বছর পর পানিতে দেখা দিল প্রোটোপ্লাজম। বিভিন্ন মৌলিক জিনিসের মিশ্রণের ফলেই এর জন্ম। আর এই প্রোটোপ্লাজম থেকেই পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার হলো। এই প্রাণির নাম হলো অ্যামিবা।    

অ্যামিবা থেকেই ধীরে ধীরে বদলাতে বদলাতে একসময় পানিতে গাছ দেখা দিল যেগুলো হলো বর্তমানের গাছের আদিপুরুষ। এছাড়া ট্রাইলোবাইট নামের এক প্রকার প্রাণি। ট্রাইলোবাইট থেকে একসময় বিবর্তনে জন্ম নিল অস্ট্রাকোড্রাম।  অস্ট্রাকোড্রামের শরীরেই প্রথমবারের মত মস্তিষ্ক তৈরি হয়। অস্ট্রাকোড্রাম থেকে বদলাতে বদলাতে জন্ম নিল মাছ, প্রথম মেরুদণ্ডয়ালা প্রাণি। মাছের জন্মের পর পানি ছাড়াও মাটিতে গাছপালা জন্ম নিতে শুরু করে। 

এরপর মাছ এর থেকেই উভচর প্রাণী জন্ম নেয়। এদের শরীরে ফুলকা এবং ফুসফুস উভয়ই দেখা দিল। তারা মাটি এবং পানি উভয় জায়গায় বিচরণ করতে লাগে। একসময় এই উভচর প্রাণীদের শরীরে শুধুমাত্র ফুসফুস দেখা দিতে লাগল। 

উভচর প্রাণি থেকেই বিবর্তনে আসল সরীসৃপ জাতীয় প্রাণি। উভচর প্রাণিরা পুরোপুরি স্থলচর জীব হতে পারে নি তাদের ডিমের কারণে। তাদের ডিম পানিতে না থাকলে শুকিয়ে যেত যা থেকে নতুন প্রাণের জন্ম হত না। তাই তাদের বারবার ফিরতে হত পানিতে। কিন্তু সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের ডিম সেই সমস্যায় পড়ল না। তাই সরীসৃপরাই প্রথম স্থলচর প্রাণী।   

ধীরে ধীরে পৃথিবীতে এই স্থলচর সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের বিচরণ বাড়তে লাগল। কারো কারো চামড়ার ডানা জন্মাল যা দিয়ে তারা উড়তে পারল। এই সরীসৃপরাই হলো আমাদের মুখে মুখে সমলোচিত প্রাণি, ডাইনোসর।

কেন এই ডাইনোসর বিলুপ্ত হলো সে বিষয়ে অনেক মত আছে। উল্লেখযোগ্য হলো,  উল্কাপিণ্ডের আঘাত, খাদ্যের অভাব, অতিরিক্ত গরম অথবা ঠাণ্ডা ইত্যাদি।

ডাইনোসর বিলুপ্ত হবার আগেই তাদের থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন ধরনের প্রাণির জন্ম নিল। তারা হলো স্তন্যপায়ী প্রাণি যারা ডিমের বদলে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। সেসব প্রাণিদের গা ছিল লোমে ঢাকা এবং তারা ছিল গরম রক্তের অধিকারী।  

এসব স্তন্যপায়ী প্রাণিদের নাম দেওয়া হয়েছে প্রাইমেট। প্রাইমেটে কয়েকটি প্রাণির নাম আছে। যেমন-বাঁদর, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং ও বনমানুষ।  

মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) আসে আরো পরে। প্রথমে ছিল বনমানুষ। বনমানুষের গা ছিল লোমে ঢাকা, পেছনে ছিল লেজ এবং তারা ছিল চতুষ্পদী। তারা বিচরণ করত গাছের ডালে।

আস্তে আস্তে সেসব বনমানুষ চার পা ছেড়ে দুই পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো শিখল। খাবারের খোঁজে মাটিতে বিচরণ করতে লাগল তারা।

মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল হাতের। বনমানুষদের হাত অন্যান্য প্রাইমেটের চেয়ে আলাদা ছিল। এদের হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হাতিয়ার তৈরি করা শিখতে লাগল।

হাত দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করা শেখায় আমরা অসাধ্য সাধন করতে শিখেছি। বনমানুষ যখন হাতকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসল, পেছন থেকে লেজ খসে গেল, ধীরে ধীরে লোমও ঝরে যেতে লাগল তখনই আমরা হয়ে উঠলাম মানুষ।

পরিশ্রম, বুদ্ধি ও বিবেকের কারণে আমরা সেরা জীব। আস্তে আস্তে সুপার হিউম্যান হবার দিকে এগোচ্ছি। সবই বিবর্তন ও প্রকৃতির খেলা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com