ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

মা যেমন সন্তানকে স্নেহে ধারণ, লালন-পালন এবং বড় করে তোলেন, তেমনি পৃথিবীকে আশ্রয় করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সমগ্র জীব-জগৎ। তাই পৃথিবীকে আখ্যায়িত করা হয় মাতৃরূপে। প্রতিটি স্তরেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সকলকে নির্ভর করতে হয় প্রকৃতি ও পরিবেশ তথা পৃথিবী নামে এ গ্রহটির ওপর।
ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

আমাদের শ্বাস গ্রহণ থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণে ভূমিকা রয়েছে প্রকৃতির। মানব সভ্যতার শুরুতে মানুষ বাস করত প্রকৃতির রাজ্যে। ধীরে ধীরে মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় অর্জনের সাথে সাথে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নিতে শিখল।

সময়ের অগ্রগতি ও সভ্যতার বিকাশ ধারায় প্রতিনিয়ত নানাভাবে মানুষ প্রকৃতির উপর প্রতিষ্ঠা করল আধিপত্য। যার ফলাফলস্বরূপ মানুষ এখন পৃথিবীকে নিজের চাহিদা মতো ব্যবহার করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সকল প্রয়োজন ও সমস্যা রূপান্তর করেছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে। প্রচলিত কথায়, ‘পৃথিবী এখন মানুষের হাতের মুঠোয়।'

তবে এসকল কিছু যেমন অনেক সুযোগ সুবিধা তৈরি করেছে, তেমনি এগুলোর অসচেতন ব্যবহার সৃষ্টি করেছে নানা জটিলতা। মানুষ জেনে বা না জেনেই তার দৈনন্দিন অনেক কাজকর্ম দ্বারা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এতে যে শুধু পৃথিবীর ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, বরং ক্ষতি হচ্ছে সমগ্র প্রাণীকুলের। মানুষও যার বাইরে নয়।

অসচেতনতার ফলে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে আশেপাশের পরিবেশ। যেমন- রাস্তার পাশে ময়লা ফেলা, অপরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, পলিথিন-প্লাস্টিকের ব্যবহার, অনবায়নযোগ্য শক্তির উপর নির্ভরশীলতা, ইট ভাটা-কারখানায় পরিশোধন ব্যবস্থার অভাব, পাহাড় কাটা, নির্বিচারে গাছ কাটা, জলাভূমি ভরাট প্রভৃতি। যার প্রভাব পড়ছে সমগ্র পৃথিবীর উপর এবং সৃষ্টি হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো পরিবেশ সমস্যা। যেগুলো অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

বর্তমানে পরিবেশ সমস্যা শুধুমাত্র জাতীয় নয়, একটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মসূচি। এরই একটি অংশ ‘আর্থ ডে’ বা বাংলায় ‘ধরিত্রী দিবস’।

প্রতিবছর ২২ এপ্রিল দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে আর্থ ডে বা ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালিত হয়। যার মূল উদ্দেশ্য পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমর্থন প্রদর্শন করা। পৃথিবীর পরিবেশ দূষণমুক্ত এবং স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বের সাথে পালন করা হয় দিনটি। যেটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘আর্থ ডে নেটওয়ার্ক’।

শিল্পবিপ্লবের পর উন্নত দেশগুলোতে শিল্পখাতের দিকে অধিক ঝুঁকে পড়ে। শিল্পের ব্যাপক বিস্তারের ফলে বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশের মতো আমেরিকায় রাসায়নিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও কালো ধোয়ার নেতিবাচক প্রভাব জনজীবনে প্রকট হতে শুরু করে। তখন গবেষকরা এটিকে স্বাস্থ্য সমস্যা ও পরিবেশ সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এটা নিয়ে তৎকালীন সমাজে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তবে সানফ্রান্সিসকোর শান্তি কর্মী জন ম্যাককোনেল ১৯৬৯ সালে পরিবেশ পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতার ধারণা সকলের সামনে আনেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের অংশগ্রহণে গুরুত্ব সহকারে দিনটিকে উদযাপন করা হয়। এরপর তৎকালীন মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ২২ এপ্রিল দিনটি পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশেষ একটি দিন হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর ১৯৯০ সালে এ দিনটি ১৪১ দেশের সমন্বয়ে পালন করা হয়। প্রথমদিনে স্থানীয়ভাবে পালিত হলেও, ধীরে ধীরে এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্থান করে নেয়। এখন পৃথিবীর ১৯২ টি দেশে দিবসটি পালন করা হয়।

বর্তমান সময়ে পরিবেশ নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে আর্থ ডে নেটওয়ার্ক। তারা উদ্যোগটিকে রূপ দিয়েছে একটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনে। পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিশ্বের একশ ৯৫টি দেশে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ এ আন্দোলনের সাথে কাজ করছে। আর প্রতিবছর এক বিলিয়নের অধিক মানুষ তাদের আর্থ ডে’র কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

সংগঠনটি ২০২০ সালে আর্থ ডে’র ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে নানা কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন, বনায়ন, বনভূমির মানচিত্র, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবেশ প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতন করা, পরিবেশ সংরক্ষণে পরামর্শ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে ধরিত্রী দিবস পালন করা হয়। এবারে বিষয় হলো, প্লাস্টিক দূষণ রোধকরণ। প্লাস্টিক জাতীয় অপচনশীল পদার্থ বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণ ও ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অনেকাংশে দায়ী। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এটিকে প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিবেশের অংশ হিসেবে পরিবেশ সংরক্ষণের মূল দায়িত্ব মানুষের। বিশেষ কিছু না হলেও, সকলে একটি করে গাছ লাগালে সেটা পৃথীবীর জন্য অনেক বড় অবদান হতে পারে। তাই পৃথিবীকে অস্তিত্বের উপযোগী রাখতেই প্রতিটি মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com