বরিশাল জেলা সদর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে কড়াপুর ইউনিয়নের উত্তর দিকে রায়পাশা গ্রামের মেঠো রাস্তা ধরে হেঁটে গেলেই দেখা মেলে সুবিশাল দুটি দিঘির মাঝে লাল রঙের সুউচ্চ মিনার ও সুবিস্তৃত সিঁড়ি বিশিষ্ট চারকোণা আকৃতির নান্দনিক এই মসজিদটি।
উঁচু বেজমেন্টের উপর নির্মিত দ্বিতল আকৃতির এই মসজিদটির নিচে ছয়টি দরজার অভ্যন্তরে রয়েছে কয়েকটি কক্ষ। দোতালায় মূল মসজিদে ওঠার জন্য রয়েছে একটি প্রশস্ত সিঁড়ি এবং এর নিচেই রয়েছে বাধাই করা দুইটি সমাধি।
মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা। মসজিদের সামনের দেয়ালে চারটি ও পেছনের দেয়ালে চারটি মিনার সমেত মোট আটটি মিনার, সামনের এবং পেছনের দেয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে মোট ১২টি ছোট মিনার ও মসজিদের উপরিভাগে তিনটি ছোট আকারের গম্বুজ রয়েছে।
তিনটি গম্বুজের মাঝখানের গম্বুজটি অন্য দুটি গম্বুজের চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। মসজিদের উপরিভাগ ও সবগুলো মিনারে নিখুঁত ও অপূর্ব সুন্দর কারুকার্যময়। পাশাপাশি মসজিদের দুই দিকে রয়েছে বিশালাকারে দুটি দিঘি। দিঘি কালের সাক্ষী বহন করে চলা এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস সম্পর্কে মতান্তর রয়েছে।
‘বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন’ গ্রন্থে পড়লাম, “মিয়াবাড়ি মসজিদ বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে আঠারো শতকের দিকে নির্মিত। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াত মাহমুদ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হন এবং তার বুর্জুগ উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেয়া হয়। দীর্ঘ ষোল বছর পর দেশে ফিরে তিনি দুটি দিঘি এবং দোতলা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।”
মসজিদটির স্থাপত্যরীতিতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত শায়েস্তা খান নির্মিত কারতলব খান মসজিদের অনুকরণ দৃশ্যমান। মিয়াবাড়ি মসজিদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই দূর-দুরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা।