সাংবাদিক নূরজাহান বেগমের কথা

যে সময়ে বাঙালি মুসলিম নারী মানেই ছিল অন্তঃপুরের বাসিন্দা সেই সময়টাতেই সাংবাদিকতা করেছেন নূরজাহান বেগম।
সাংবাদিক নূরজাহান বেগমের কথা

তার বাবা সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের হাত ধরে এই পেশায় পা রাখেন তিনি।

১৯২৫ সালের চৌঠা জুন চাঁদপুরের চালিতাতলী গ্রামে জন্ম নেন এই পথিকৃৎ। তার ডাক নাম ছিল নূরী। বাবার নাম মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও মা ফাতেমা বেগম।

১৯৪২ সালে ভারতের বিহার রাজ্যের ভাগলপুর জেলার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে আই এ পাস করেন। পরে এই কলেজ থেকেই তিনি উচ্চশিক্ষা নেন।

নুরজাহান বেগমের সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় ১৯৪৫ সাল থেকে। যখন তিনি বিএ শ্রেণিতে পড়তেন। প্রথমে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। চারমাস পরে বেগমের সম্পাদক হন তিনি। এই সুবাদে দেশের অগণিত নারী স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখেছে, প্রেরণা পেয়েছে। নারী শিক্ষা, নারী জাগরণ, নারী সাহিত্যের বিকাশ হয়েছে, বিকাশ হয়েছে নারীর মেধা ও মননের।

বেগমের বিশেষ সংখ্যাগুলো নারী মহলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময় মেয়েদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা বলতে বেগমই ছিল একমাত্র সচিত্র সাপ্তাহিক।

নূরজাহান বেগমের হাতেই গড়ে উঠে বেগম ক্লাব। এই ক্লাবের সদস্য নারী লেখিকারা মাসিক একটা আলোচনা করতেন। প্রথম দিকে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করলেও পরে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। মেয়েদের পড়ার জন্য বেগম ক্লাবে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ক্লাব থেকে সমাজসেবকদের সম্মাননাও দেওয়া হতো।

স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ সরকারের রোকেয়া পদক। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুনন্নেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন থেকে পেয়েছেন স্বর্ণপদক।

২০১০ সালে পত্রিকা শিল্পে তার অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা পান নূরজাহান বেগম।

১৯৪৭ থেকে ২০১৬। দীর্ঘ ৬৯ বছর একটানা বেগম পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন নুরজাহান বেগম। ২০১৬ সালের ২৩ মে ৯১ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com