অরক্ষিত নালায় ডুবছে দেশের ভবিষ্যৎ

রাজধানীতে অরক্ষিত নালায় পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেই। বিগত পাঁচ বছর ধরে এটি থেমে নেই। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করলেও নালা বা খালগুলো সংস্কারে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
অরক্ষিত নালায় ডুবছে দেশের ভবিষ্যৎ

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে শাহজাহানপুরে খোলা নলকূপের পাশে খেলতে গিয়ে পাইপের ভেতর পড়ে যায় শিশু জিহাদ। এ খবর দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফায়ারসার্ভিস রাতভর উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে পরেরদিন জানায় শিশুটি পাইপে নেই এবং অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয়। তবে এ ঘোষণার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই নিজেদের তৈরি বিশেষ জাল দিয়ে চার বছর বয়সী জিহাদকে উদ্ধার করেন তিনজন স্বেচ্ছাসেবী। তবে শিশুটিকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় চার জন কে দশ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ছয় বছর বয়সী নীরব সবাইকে নীরব করেই চলে যায়। কদমতলীতে পয়ঃনালায় পড়ে যাওয়ার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর তার লাশ পাওয়া যায় বুড়িগঙ্গার তীরে আরেক নালায়।

এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুলাইয়ে একই ধরণের আরো দুটি ঘটনা ঘটে। মহাখালীতে পরিত্যক্ত ঝিলে ডুবে যায় ছয় বছরের শিশু সানজিদা। ড্রেনে পড়ার প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

সানজিদার ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই মিরপুরে পয়ঃনালায় পড়ে যায় চার বছর বয়সী শিশু সাব্বির। তাকে ১৯ ঘণ্টা পর মৃত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা।

বছরের এই ক্রমধারা যেন থেমে নেই। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর মুগদায় নর্দমায় পড়ে তিন বছর বয়সী শিশু হৃদয় নিখোঁজ হয়। ছয়দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়।

একই ধরণের ঘটনায় সম্প্রতি বলি হয়েছে পাঁচ বছর বয়সী শিশু জিসান। ২০১৮ সালের ৯ মার্চ আদাবরে নবোদয় হাউজিং এলাকায় খালে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার চার ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ২০১৭ সালে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলে, হামলা ও বিভিন্ন দূর্ঘটনায় শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ছয়শ ৬৮ টি। এরমধ্যে শুধু পানিতে ডুবে মারা গেছে তিনশ ৯১ শিশু। তবে শুধু রাজধানীতেই অরক্ষিত নালা বা খালে ডুবে শিশুমৃত্যুর আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই।

এ বিষয়ক সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আক্রান্ত শিশুদের বয়স তিন থেকে আট বছরের মধ্যে। আর এই শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই খেলতে গিয়ে অরক্ষিত নালায় বা খালে পড়ে গেছে এবং স্বজনদের চোখের আড়ালে ছিল শিশুটি। ঘটনাগুলো বেশিরভাগই বস্তির আশে পাশের এবং দরিদ্র পরিবারের শিশু আক্রান্তের ঘটনাই বেশি।

গরিব পরিবারের শিশু কিংবা ধনী পরিবারের শিশু উভয়ই রাষ্ট্রের কাছে সমগুরুত্বপূর্ণ। উভয়ই দেশের ভবিষ্যৎ। বাবা মায়ের পক্ষে সর্বদা শিশুর পিছু পিছু থাকা সম্ভব হয় না। এখন নারী পুরুষ উভয়ই চাকরি করে থাকেন। শিশুরা যেন দূর্ঘটনার শিকার না হয় এই নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকেই দিতে হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com