অনেক প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, মিছিল, স্লোগান, আর ভাষা শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে। তবে আজকের প্রজন্মের অনেকেই এ ভাষার মর্যাদা বোঝে না। বলে বাংলা বলা তো সিম্পল!
সেটা ঠিক। মায়ের কাছ থেকে শেখা ভাষা সিম্পল হওয়ারই কথা। তা জলের মতো সহজ। তবে সেটা আমরা অনেকেই শুদ্ধভাবে বলি না। বলতে পারি না। কখনও তাকে বিকৃত করে উচ্চারণ করি। কখনও বিদেশি ভাষার সাথে গুলিয়ে, ঘুলিয়ে তুলি বাংলাকে।
পাঠ্যবিষয় হিসেবেও এর গুরুত্ব ছাত্রদের কাছে অবহেলার। ব্যাকরণ শেখার কথা বাদই দিলাম। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিষয়টি অবজ্ঞার শিকার।
কথায় কথায় দুয়েকটি বিদেশি শব্দ বাংলার সঙ্গে মিশিয়ে একরকম জগাখিঁচুড়ি ভাষার প্রচলন ইদানিং ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমার এক বন্ধু বলে, বাংলা বলা তো সিম্পল! বিদেশি ভাষা বলার মধ্যে ক্রেডিট আছে।
এ ব্যাপারে আমারও কোনো সন্দেহ নাই। একাধিক ভাষা জানা জ্ঞানীর কাজ। তবে যে নিজের মাতৃভাষা ভালোভাবে বলতে পারে না বা এর ইতিহাস জানে না, শ্রদ্ধা করে না, সে অন্য ভাষাও ভালোভাবে শিখতে পারবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কাছে শুনেছিলাম, শিশুদের মজা বা বিনোদনের মাধ্যমে শেখালে তবেই বাংলা ভাষায় আগ্রহ বাড়বে।
তিনি ভিনদেশীয় ভাষা শিক্ষার বিষয়ে বলেন, আমরা সব ভাষা শিখতে পারি, সেই ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি কিন্তু সেটা নিজের ভাষাকে ভুলে নয়।
শিক্ষকদের মতে, বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে বাংলার চেয়ে অন্য ভাষা গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই তারা অন্যভাষায় যে আগ্রহ পাচ্ছে, বাংলায় নয়।
সন্তানের বিদেশি ভাষার দক্ষতা অভিভাবকদেরও বেশ সন্তুষ্ট করে।
এগুলো দোষের কিছু নয়। ভাষা গতিশীল। এর পরিবর্তন অনিবার্য! তবে মাতৃভাষাকে রপ্ত করলেই অন্য ভাষাকে আত্মস্থ করা সহজ হয় বলে আমার বিশ্বাস। অন্য ভাষা শেখাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিই। একজন মানুষ যত বেশি ভাষা জানেন, তার জ্ঞান ততো বেশি। তবে কখনই মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে নয়।