সম্প্রতি ‘অটিস্টিক শিশুরা কেমন হয়’ বইটি পড়েছি। বইটি হ্যালোর সাংবাদিক নানজিবা খানের লেখা। এ সম্পর্কে হ্যালোর পাঠকদের জানানোর তাগিদ থেকেই রিভিউটি লিখতে ইচ্ছে হলো।
শেষ আদমশুমারিতে বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রতিবন্ধীতার শিকার বলে তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ পায় খুবই কম। গ্রামাঞ্চলে এখনো অটিজম আক্রান্তকে ওঝার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বইটি তথ্যভিত্তিক। কোনো রহস্য নেই, কোনো ফ্যান্টাসি নেই। বইটির বিষয়টিই শেষ পর্যন্ত পড়ার আগ্রহ বাড়িয়েছে, সৃষ্টি করেছে উদ্বেগ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং অনেক তথ্য একসঙ্গে থাকায় বইটির গ্রহণযোগ্যতা আমার কাছে খুবই বেশি। বইটিকে অভিভাবকরা সন্তানের গাইডলাইন হিসেবে নিতে পারতেন আরও কিছু তথ্য যোগ করলে।
একজন নবীন লেখকের এত সুন্দর একটি বই, চমৎকার ধারণা এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও প্রশংসার দাবি রাখে।
এই লেখকের বইটি অন্যকোনো বইয়ের অনুবাদ নয়। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতীয় সংস্থা ও সরকারি তথ্য একত্র করে লেখা হয়েছে বইটি।
৯৬ পৃষ্ঠার বইটিতে প্রথমেই দেওয়া হয়েছে অটিজম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা। তারপর রয়েছে একটি অটিজম শিশুর বেড়ে ওঠার গল্প।
লেখকের ছোট ভাইই একজন অটিস্টিক শিশু। ভাই-বোনের খুনসুটি আর বেদনার কথা রয়েছে এখানে। এক রাতে ওষুধ খাওয়ানোর সময় ছোট ভাইটির খিঁচুনি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়া আর পুরো পরিবারের ছন্দ মুহূর্তেই ওলটপালট হয়ে যায়, সে ঘটনাগুলি খুব বেদনাদায়ক।
কীভাবে এবং কেন শিশুরা অটিজমের শিকার হয়, কীভাবে বুঝবেন শিশুটি অটিস্টিক? অটিস্টিক শিশুরা কি প্রতিবন্ধী? তিন মাস বয়স থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত একজন অটিস্টিক শিশু কী কী আচরণ করতে পারে? এই শিশুদের বিকাশে কোন বাধার মুখে পড়তে হয়? একজন অটিস্টিক শিশুর প্রতি অভিভাবকের করণীয় কী হতে পারে? অটিস্টিক শিশুদের স্কুলসহ বিশিষ্টজনরা অটিস্টিকদের নিয়ে কী ভাবছেন সব উত্তরই রয়েছে বইটিতে।
বইটি পড়ে আমার অনেক ভুল ধারণা ভেঙেছে, সমৃদ্ধ হয়েছে জ্ঞানের ঝুড়ি। এর আগে অটিস্টিক শিশুদের সম্পর্কে যতটুকু জানতাম তারচেয়ে অনেক বেশি ভুল জানতাম।