বসন্ত এসে গেছে

“আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, শাখে শাখে পাখি ডাকে কত শোভা চারিপাশে।”
বসন্ত এসে গেছে

পহেলা ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের মতোই আজও সূর্য ওঠা সাধারণ একটি দিন বটে; কিন্তু এমনটা কেউ বললেই তো আর মেনে নেওয়া যায় না। কারণ আজ বসন্ত। 

দখিনা বাতাসে ছেয়ে আছে ফাগুনের স্পর্শ। পায়ে জড়ানো ঘাসফুল থেকে শুরু করে উঁচু ডালের ওই লাল শিমুলটিও জানান দিচ্ছে আরো একটি বসন্তের আগমন। প্রকৃতির বাঁধা নিয়মে ঋতুর পরিক্রমায় প্রকৃতির চিরন্তন সেই প্রাণ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। আর শীতের ত্যাগের তপস্যা তো এই নবজন্মের প্রতীক্ষাতেই। এবার তবে শীতের রুক্ষতা, বিবর্ণতাকে বিদায় জানিয়ে নব পত্র-পুষ্পে সজ্জিত প্রকৃতিকে বরণ করে নেবার পালা। 

প্রকৃতি যেন নুতনের বাসন্তী সাজে রাঙিয়েছে আপনাকে। সাথে শিমুল রঙের ডাল আর কোকিলের কুহুরব যোগ করেছে নতুন ধারা, নতুন সুর। সব মিলিয়ে আনন্দঘন এক উৎসবক্ষণ। 

বসন্ত ভালবাসা অনুভবের ঋতু, তারুণ্যের ঋতু, ফুল-ফাগুনের ঋতু। যুগে যুগে এ ফাগুন তথা বসন্ত পূজিত হয়ে আসছে কবি সাহিত্যিকদের কবিতা ও গানে। বসন্তের রস-রূপ-গন্ধে বিমোহিত হয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রকৃতিপ্রেমীরা। তারা বসন্তকে আখ্যায়িত করেছেন নানা নামে, নানা উপমায়, নানা রূপক কিংবা নানা ছন্দে। বর্ণনা করেছেন নানা দৃষ্টিতে। তাদের মধ্যে কবিগুরুর এমনই একটি গান – 

“ আহা, আজি এ বসন্তে

এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে

এত পাখি গায় আহা আজি এ বসন্তে।” 

আবার বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের অনুভূতিতে- 

“বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে

বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।”

প্রকৃতির নিজেকে সাজিয়ে তোলার এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই তরুণ-তরুণী কিংবা অন্য বয়সের মানুষেরাও। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে তারাও সেজেছে রঙ-বেরঙের পোষাকে বিশেষ করে প্রাধান্য পেয়েছে হলুদ পাঞ্জাবী, আর বাসন্তী রঙের শাড়ি। মেয়েদের খোঁপায় রঙ-বেরঙে ফুল, মাথায় টায়রা তো আছেই। শ্রেণি-বৈষম্য, বর্ণবাদ বা সাম্প্রদায়িকতা থেকে বেরিয়ে সবাই একাত্ম হয় তাদের অভিন্ন পরিচয়ে। প্রমাণ করে তারা সবাই মানুষ, তারা বাঙালি। এ যেন তাদের মিলন-মেলা, প্রাণের উৎসব। প্রকৃতি ও প্রাণের উচ্ছ্বলতা যেন মিলেমিশে একাকার। এই উৎসবের সাথে আরো জড়িয়ে আছে বাংলা ও বাঙালির আমোদপ্রিয় জীবনের তাৎপর্য ও বিশেষত্ব। যা তাদের লালিত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যপ্রিয়তার প্রকাশ। 

আর এই অনুভবকে পূর্ণতা দিতে বাঙালি প্রতি বছর মিলিত হয় বসন্তের আহ্বানে। তাই আজকের এই দিনে দেশের সব স্তরের মানুষেরা সমবেত হয়েছে পহেলা ফাল্গুনের ‘বসন্ত উৎসব’ এর মাধ্যমে বর্ণিল বসন্তকে স্বাগত জানাতে।

দেশের  অন্য স্থানের মতো যশোর জেলাতেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হচ্ছে এ বসন্ত উৎসব। এদের মধ্যে যশোরের ঐতিহ্যবাহী পৌর পার্কের ‘সবুজ চত্বর’ এ যশোর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত ‘বসন্ত বরণ উৎসব’ অন্যতম। বসন্তের প্রকৃতির উৎকর্ষতা নগরজীবনে পরিপূর্ণভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ না হলেও, কমতি নেই সাধারণ মানুষের আয়জন বা উপভোগের প্রচেষ্টায়। গান, নাচ, আবৃত্তি, নানা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পাচ্ছে ঋতু-বন্দনা। সমাগম ঘটেছে নানা বর্ণ, নানা শ্রেণি, নানা বয়সের অসংখ্য মানুষ ও তাদের প্রিয়জনের। তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করছে, প্রকৃতির রঙের ছোঁয়া পৌঁছে গেছে তাদের হৃদয়েও। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com