শিশুশ্রম শিশুশিক্ষার বাধা

বগুড়ার একটি নামী কলেজে একাদশে পড়ার সুবাদে শহরে আসা। কলেজের পাশে রেললাইনের ধারে বন্ধুর সাথে ঘুরতে বের হয়ে যা দেখলাম তাতে মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল।
শিশুশ্রম শিশুশিক্ষার বাধা

বগুড়ার হাড্ডিপট্টি এলাকার রেললাইনের ধারে উদোম গায়ে খেলছে শিশুরা। তাদের দেখে আমার গ্রামের শিশুদের চেয়েও হাঘরে আর দরিদ্র মনে হলো।

জানতে পারলাম এরা বস্তিবাসী শিশু। এদের ঘরবাড়ি বলতে, পলিথিনের ঝুপড়িগুলো।

মাথায় তেল নাই, গায়ে নাই একটা ভালো জামা। কিন্তু ধনী শিশুদের সাথে এদের হাসিমুখের কোনো ফারাক নাই। বরং এরা উচ্ছ্বসিত বেশি। আর স্বাধীনও। যখন যা মন চাচ্ছে তখনই তাই করছে।

আরেক দিনের ঘটনা। বস্তিতে গিয়ে দেখি আজ আর তারা খেলছে না। আজ তারা ব্যস্ত। আর্বজনার স্তুপ থেকে বোতল ও অন্য বাতিল জিনিস কুড়িয়ে বস্তায় রাখছে। পরিবেশটাও শিশুদের অনুকূল নয়। নাকে রুমাল দিয়ে ওই ময়লা স্তুপের পাশ দিয়ে হাটছে পথচারী।

ওদের মধ্যে একজনের নাম নুর ইসলাম। বয়স নয়-দশ হবে। চুলগুলো এলোমেলো, শরীরে একটা ছেঁড়া গেঞ্জি। প্যান্টটা নোংরা। বলল, পেটের দায়ে আবর্জনা থেকে টুকিয়ে নেয়, যেটুকু বিক্রি করলে পয়সা পাবে। না কুড়ালে খাবার জুটবে না।

একটু এগিয়ে যেতে দেখা গেল, ভাত রান্না করছে আট-নয় বছরের একটি মেয়ে। ও বাড়ির সব কাজ করেও স্কুলে পড়ে। বোতলও টোকায় মাঝে মধ্যে।

মিষ্টির ইচ্ছা ও বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কথা বলতে বলতে ভাত রান্না শেষ হয়ে গেলো মিষ্টির।

ওরা আরো বলে, ওদের অনেক কিছু খেতে মন চায়। অনেক কিছু করতে মন চায়। ভালো কাপড় পড়তে মন চায়। কিন্তু ভাগ্যে জোটে না। মাঝে মাঝে রাস্তায় বোতল টোকাতে গিয়ে পিটুনিও খেতে হয় অনেক শিশুকে।

কষ্ট ও দুঃখের মধ্যে বেড়ে ওঠে বস্তির শিশুর শৈশব। এসব শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। কিন্তু ওরা অন্যের করুণা চায় না। ওরা ওদের অধিকার চায়। ওদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাটুকুই চায় ওরা। সবাই মিলে এগিয়ে এলে হয়তো ওদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। পৌঁছে দেওয়া সম্ভব পরিচ্ছন্ন শৈশব ও অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা।

কারণ ওদের মৌলিক অধিকারটুকুও পায় না তারা। ওদের কথা কেউ ভাবে না। সমাজে যারা উদ্বৃত্ত সম্পদের মালিক, বস্তির শিশুদের দিকে যদি হাত বাড়িয়ে না দেন, সরকার আর বেসরকারি সংগঠন মিলে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক-এ তিন স্তরেই তুলনামূলকভাবে কম ভর্তি হয়। শহরের চেয়ে গ্রামের শিশুরা প্রাক-প্রাথমিকে কম ভর্তি হয়। মেট্রোপলিটন এলাকার বস্তির শিশু তুলনামূলকভাবে কম প্রাথমিক স্কুলে যায়।

শিক্ষিত মায়ের শিশুর তুলনায় কম শিক্ষিত মায়ের শিশুরা প্রাথমিক স্কুলে কম যায়। প্রাথমিক স্কুলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের হার বেশি। শিশুশ্রম এ ক্ষেত্রে বাধা। নিম্ন মাধ্যমিক স্তরেও পরিস্থিতি একই রকম।

মেট্রোপলিটন এলাকার বস্তির শিশু, কম শিক্ষিত মায়ের শিশু স্কুলে কম যায়। এ ক্ষেত্রেও ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে পিছিয়ে বলে ইউনিসেফ ও ইউনেসকো ‘স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের নিয়ে বৈশ্বিক উদ্যোগ’ (গ্লোবাল ইনিসিয়েটিভ অন আউট-অব-স্কুল চিলড্রেন) নামের সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com