শিশু গৃহকর্মী থেকে একুশে পদক পাওয়া সাহিত্যিক

সুকুমার বড়ুয়ার পড়ালেখা করার কথা ছিল না। তিনি ছিলেন অনাথ এক শিশু। অন্যের বাড়িতে কাজ করে পেটের ভাত জুটত তার।
শিশু গৃহকর্মী থেকে একুশে পদক পাওয়া সাহিত্যিক

তবু এরই মাঝে কিছুদিন মামা বাড়ি ও কিছুদিন দিদির বাড়িতে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলেন। এরপর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।

জীবিকার তাগিদে এক সময় তিনি ফলমূল, আইসক্রিম ফেরি করতেন। এরপর ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি হিসেবে কাজ পান। পদোন্নতির পর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হয়ে স্টোর কিপার হিসেবে অবসর নেন।

হ্যালোকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে নিজের শৈশব সম্পর্কে তিনি বলেন, “অভাব ছিল। অনাথ ছিলাম তো! বাড়ি বাড়ি কাজকর্ম করেই সময় কাটতো। লেখা ছাপা হয়েছে তখনও এক বাসায় কাজ করতাম। যাদের রান্না করতাম, তাদের পাতে ভাত বেড়ে দিয়েই পত্রিকা আনতে ছুটলাম। তারপর এনে তাদের দেখাতাম। তারা বলতেন, ‘তুই না রান্না করিস? কখন লেখক হয়ে গেলি?’ তাজ্জব হয়ে যেত তারা।”

হ্যালোকে আরও বলেছিলেন, ‘ছড়াকার হয়ে উঠার পেছনে মূলত নিজের সাধনাটাই ছিল সবার আগে।’      

শারীরিক কারণে প্রায় বাড়িবন্দি, এই ছড়াকার। এখন লেখলেখির বিষয়ে বলেন, ‘গৃহবন্দি জীবন তো এক ধরনের বিচ্ছিন্ন জীবন। বর্তমান সময়ের কাজ নিয়ে খুব বেশি ধারণা নেই।

‘তরুণদের বলব, তোমরা বলবে কম, লিখবে কম। কিন্তু তোমরা ভাববে বেশি।’

১৯৬৩ সালে তোপখানা রোডে ছয় টাকা ভাড়ায় বেড়ার ঘরে বাস করেই স্বাধীনভাবে লেখালেখি শুরু করেন।

কচিকাঁচার আসর, খেলাঘর আর মুকুলের মাহফিলে তার লেখা ছাপা হতে থাকে। স্কুলের পাঠ্যবইয়েও সুকুমার বড়ুয়ার ছড়া পড়ানো হয়।

প্রায় ৬০ বছর ধরে শুধু ছড়া লিখে ‘ছড়ারাজ’, ‘ছড়াশিল্পী’, ‘ছড়াসম্রাট’ নানা অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছেন। সহজ-সরল কথায় ও ভাষায়, ছন্দ ও অন্ত্যমিলের অপূর্ব সমন্বয় দেখা তার চরায়।

উদ্ভট, ব্যঙ্গাত্মক, হাস্যরসাত্মক, কৌতূহলোদ্দীপক, নৈতিক শিক্ষামূলক রচনার পাশাপাশি গণমুখী, রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ তার রচনাবলী।

ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে 'একুশে পদক' পান সুকুমার বড়ুয়া।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সম্মাননা, অবসর সাহিত্য পুরস্কার, আনন ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা, চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

পাঁচ জানুয়ারি তার ৮০ তম জন্মদিন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com