পিতা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া এবং মাতা গুলজান বেগমের ঘরে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার খানাকুল গ্রামে ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি জন্মেছিলেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক শওকত ওসমান।
তার নাম ছিল শেখ আজিজুর রহমান। শৈশব থেকেই অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। বাল্যশিক্ষার হাতেখড়ি ১৯২২ সালে সবলসিংহপুর গ্রামের মক্তবে। পরে নন্দন পুরের রূপচাঁদ গুপ্ত একাডেমিতে ভর্তি হন।
এরপর ১৯২৬ সালে সবলসিংহপুর গ্রামের জুনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৩৩ সালে ইংরেজিতে প্রবেশিক্ষা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন।
১৯৩৪ সালে ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। এরপর ১৯৩৬ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। আইএ পাসের পর একই কলেজে ভর্তি হন অর্থনীতিতে। ১৯৩৯ সালে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই ১৯৪১ সালে বাংলা এম এ পাস করেন।
কর্মজীবনের প্রথমদিকে তিনি ‘কৃষক’ নামে একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন পরবর্তীতে কলকাতার গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে লেকচারার পদে নিযুক্ত হন।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ববঙ্গে এসে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম কলেজ অফ কমার্সে এবং ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করে স্বেচ্ছা অবসরে যান।
স্কুলে থাকতেই শওকত ওসমানের লেখালেখির হাতেখড়ি। ১৯৩৪ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় প্রথম ছোটগল্প ও কবিতা। ১৯৩৮ সালে 'বুলবুল' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় একসঙ্গে তিনটি কবিতা।
চাকরি থেকে অবসর নেবার পর শওকত ওসমান পুরোদমে লেখালেখিতে মগ্ন হয়ে পড়েন।
শওকত ওসমান মূলত গল্প উপন্যাসের জন্য সমাদৃত। তবে প্রবন্ধ, নাটক, রম্যরচনা, কবিতা, স্মৃতিকথা, শিশুতোষ গ্রন্থ, অনুদিত গ্রন্থ, ছোটগল্প লেখক হিসেবে খ্যাতি পান।
তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, জননী, ক্রীতদাসের হাসি, সমাগম, জুনু, ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী, ভাব-ভাষা-ভাবনা, সংস্কৃতির চড়াই উৎরাই, উল্লওটেন সাহেবের বাংলো, মস্কুইটোফোন, স্বজন সংগ্রাম, গুড বাই জাস্টিস মাসুদ, মুজিবনগর, অস্তিত্বের সঙ্গে সংলাপ, আর এক ধারাভাষ্য ইত্যাদি।
সাহিত্যসাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, একুশে পদক, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা।
১৯৯৮ সালের ১৪ মে ঢাকায় মারা যান এই গুণী সাহিত্যিক।